ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে হয়রানি বন্ধসহ আট দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার বেলা ১২টায় এই শিক্ষার্থী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দেন।
এই শিক্ষার্থীর নাম হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।
স্মারকলিপি দেয়ার আগে তিনি বেলা ১১টা থেকে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে অবস্থান শুরু করেন। স্মারকলিপি দেয়া শেষে এই শিক্ষার্থী বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।
এসময় তিনি ‘লাঞ্চের পরে আসুন’ সুলভ আচরণ বন্ধ করুন, পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন, ডিজিটাল যুগে সনাতনী পদ্ধতিতে ছাত্র হয়রানি বন্ধ হোক, ‘আমরা গোলাম নই, আমরা ছাত্র। আপনাদের ঝাড়ি খেতে আসি না, সেবা নিতে আসি’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
পরে তিনি বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনের জন্য হাসনাত আবদুল্লাহর আট দাবি হলো-
১. শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসনের জন্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে। যেখানে সেবাগ্রহীতারা সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে অভিযোগ জানাতে পারেন ।
২. প্রশাসনিক সব কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটালাইজড করতে হবে।
৩. নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিসগুলোর অভ্যন্তরে প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৪. প্রশাসনিক ভবনের অফিসগুলোর প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করতে হবে। ডিসপ্লেতে অফিসের নাম, কক্ষ নম্বর ও সেখানে প্রদত্ত সেবার বিবরণী, কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম ও ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি প্রদর্শন করতে হবে।
৫. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনেরও সংস্কার করতে হবে।
৬. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক বিদ্যা, পেশাদারিত্ব ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতমূলক করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত মানসিক সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও সেন্টারের শরণাপন্ন হতে হবে।
৭. অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজ করতে পারবেন না। এজন্য প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থিত কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ক্লাবসমূহে স্থানান্তর নিশ্চিত করতে হবে।
৮. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশবান্ধব করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশ বজায় রাখতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য হানিকর ও পরিবেশ বিপর্যয়কারী অপ্রয়োজনীয় পোস্টার লিফলেট ও ব্যানার ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।
১০ কার্যদিবসের মধ্যে এই আট দাবি বাস্তবায়নে হাসনাত আবদুল্লাহ উপাচার্যের কাছে আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
এই সময়ের মধ্যে দাবি না মেনে নিলে তিনি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানান।
স্মারকলিপি দেয়া শেষে উপাচার্য কী বলেছেন জানতে চাইলে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘উপাচার্য স্যার আমাদের কাছ থেকে স্মারকলিপি নিয়েছেন। স্যার স্বীকার করেছেন যে আমাদের দাবি করা সমস্যাগুলো আছে। এই আট দাবির কিছু দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কাজ হচ্ছে আর কিছু দাবির ক্ষেত্রে শিগগির কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার গৌরবময় শতবর্ষ পূর্ণ করলেও এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক জটিলতাজনিত হয়রানি কমেনি। এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, হল অফিস ও বিভাগীয় অফিসের মধ্যে কাজের সমন্বয়হীনতার প্রবল।
‘বাংলাদেশের সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সব ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে সেবা দেয়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান এখনও এনালগ পদ্ধতির ধুলো মলিন ফাইলপত্রের ভারে ন্যুব্জ। সেইসঙ্গে কর্মকর্তাদের গাফলতিতে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র হারানোর খবর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। এটি ডিজিটাল যুগে সনাতনী নির্যাতনের নামান্তর।’
রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি অভিযোগ করে হাসনাত বলেন, ‘রেজিস্ট্রার ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং নিয়মানুবর্তিতায়ও ঘাটতি আছে। তাদের কাজে দীর্ঘসূত্রিতাও আছে। তাদের অফিস টাইমে নির্বাচনী প্রচারণাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। অনেকে অফিস টাইমে নিজস্ব ব্যবসায়ও সময় দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের আচরণ মনিব-গোলাম পর্যায়ের।’