চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের ভর্তি পরীক্ষার ‘এ’ ও ‘সি’ ইউনিটে প্রকাশিত ফলাফলে বড় ধরনের অসংগতি ধরা পড়েছে। এক শিক্ষার্থীর দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ফলাফলে অসংগতির বিষয়টি উঠে আসে।
এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে জরুরি বৈঠকের কথা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসংক্রান্ত কোর কমিটির।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১২০ নম্বরে। এর মধ্যে ১০০ নম্বর লিখিত এবং ২০ নম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের জিপিএ থেকে নির্ধারণ করা হয়। জিপিএ থেকে প্রাপ্ত নম্বর নির্ধারণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের ডেটাসংশ্লিষ্ট বোর্ড থেকে টেলিটকের মাধ্যমে সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল। কিন্তু এবার যশোর বোর্ডের জিপিএ নম্বরের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত জিপিএতে দশমিকের পর শেষ দুই ডিজিটের শেষটি গণনা করা হয়নি বলে ‘এ’ ইউনিটের এক ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন।
পরবর্তী সময়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে ‘এ’ ও ‘সি’ দুই ইউনিটে একই অসংগতির প্রমাণ মিলেছে।
এ দুই ইউনিটের মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ২২৫ জন ও ‘সি’ ইউনিটে ৫১ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর ফলাফলে এমনটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইসিটি সেলের পরিচালক।
সংশ্লিষ্ট ইউনিট কো-অর্ডিনেটরদের দাবি, আইসিটি বিভাগের সফটওয়্যারের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এমন ভুল হয়েছে। তারা বলছেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিট ১০০ নম্বরের ফলাফল প্রস্তুত করেছে। বাকি ২০ নম্বর প্রস্তুত করেছে আইসিটি সেল। তাই এ ভুলের দায়ভার আইসিটি সেলকেই নিতে হবে।
নিজেদের ভুলেই মেধাতালিকায় এমন অসংগতি হয়েছে বলে স্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল। দাবির বিষয়টি নজরে আসার পর মেধাতালিকা সংশোধনের জন্য ইউনিট কমিটিকে জানিয়েছে তারা।
এ বিষয়ে ‘সি’ ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আইসিটিতে ১০০ নম্বরের পরীক্ষার যে ফলাফল তৈরি করে পাঠিয়েছি, সেখানে কোনো ভুল নেই। বাকি ২০ নম্বর আইসিটি সেল প্রস্তুত করেছে। বিচ্যুতি ঘটেছে জিপিএ ২০ নম্বরের ক্ষেত্রে। তারা সেটা স্বীকার করেছেন।’
কার অবহেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘ফলাফলের ২০ মার্ক আইসিটি বিভাগ কন্ট্রোল করে। টেলিটক তো আমাদের ভুল তথ্য পাঠায়নি। এটি হয়তো আমাদের সার্ভার রিসিভ করতে পারেনি, অথবা রিসিভ করলে গ্রহণ করতে পারেনি কিংবা ইনপুট দেয়ার ক্ষেত্রে আইসিটির অপারেশনাল গাফিলতি থাকতে পারে।
‘সুতরাং যার কারণেই হোক বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করতে হবে। কারণ যে ১০০ নম্বরের ফলাফল আমরা তৈরি করেছি, সেটায় কোনো বিচ্যুতি নেই, বিচ্যুতি আছে ২০ নম্বরের জিপিএতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে কোনো ব্লেম দেয়া যাবে না। আমি সব ঠিকঠাক পাঠিয়েছি। সুতরাং আইসিটি সেল জবাব দেবে কেন এটা ঘটেছে। জাতিরও এটা জানার প্রয়োজন আছে।’
আইসিটি সেল ভুলের বিষয়টি জেনেও প্রথমে তা গোপন রেখেছে বলে ধারণা এই অধ্যাপকের। তিনি বলেন, তারা হয়তো ভেবেছেন, এটা গোপন রেখেই চালিয়ে দিতে পারে। বিষয়টি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেছে, তখনই তারা এক্সপোজ করতে বাধ্য হয়েছেন। তারা স্বীকার করলেন।
ফলাফল পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন লিখিতভাবে স্বীকারোক্তি না দিলে, কারো মুখের কথায় আমরা ফলাফল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।’
আইসিটি সার্ভারের সফটওয়্যারের ত্রুটি থাকলে তা পরিবর্তন করে ঢেলে সাজানো উচিত বলে মনে করেন অধ্যাপক নিজামী। বলেন, ‘আমরা যদি ইগোইস্টিক ধারণা নিয়ে এখানে কোনো বিচ্যুতি নেই বলি, তাহলে মনে করতে হবে এখানে ব্যবসা করবার একটি অভিপ্রায় থাকতে পারে। এটি মেনে নেয়া যায় না।’
সফটওয়্যারের ত্রুটি নিয়ে বারবার বললেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেননি বলে অভিযোগ তার। তার ভাষ্য, ‘এ সফটওয়্যার নিয়ে আমরা অনেক কথা বলেছি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। আইসিটি রিলেটেড সমন্বয় কমিটির প্রধান হচ্ছেন উপাচার্য, কিন্তু সেটিতো ইঞ্জিনারিং অনুষদের ডিনের দায়িত্বে থাকার দরকার ছিল। আমরা বলেছি, সমন্বয় কমিটির প্রধান হবে পদাধিকার বলে ইঞ্জিনারিং অনুষদের ডিন। সেটিও তারা মানতে রাজি নন।’
‘এ’ ইউনিট ভর্তি কমিটির কো-অর্ডিনেটর ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘একজন ছেলে অভিযোগ করেছে, তার জিপিএ কাউন্টে ভুল হতে পারে। সে এটি অনুমান করেছে। এটি আমলে নিয়ে এনালাইসিস করে দেখে তার কথার সত্যতা আছে। আইসিটির জিপিএ আপলোডিংয়ে সমস্যা আছে। এটা আইসিটি সেলের কাজ। আমাদের আজকে বৈঠক আছে। কোনো সংশোধন থাকলে সেটা হতে পারে। তবে ভুলের দায় আমরা নেব না।’
নিজেদের ভুলেই মেধাতালিকায় এমন অসংগতি হয়েছে বলে স্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল। দাবি, বিষয়টি নজরে আসার পর মেধাতালিকা সংশোধনের জন্য ইউনিট কমিটিকে জানিয়েছে তারা।
ভুলের বিষয়টি স্বীকার করে এর ব্যাখ্যায় আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যশোর বোর্ডের এসএসসি ডেটায় একটু সমস্যা হয়েছে। এটা স্পেসিফিক কারণ বলা যাচ্ছে না, তবে টেকনিক্যাল কারণে হতে পারে। একটা এপ্লিক্যান্ট কমপ্লেইন করেছে, সেটা দেখতে গিয়েই হঠাৎ এটা চোখে পড়েছে। তখন আমি ইউনিট কমিটিকে জানিয়েছি।’
‘টেলিটক প্রথমবার আমাদের যে ডেটা পাঠিয়েছিল, সেটা অসম্পূর্ণ ছিল। ফলে আমরা আরেকবার ডেটা চাই। ডেটা পাঠানোর পরে সেটা ভিন্ন ফর্মেটে ছিল, কনভার্ট করতে কোনো সমস্যা হয়েছিল কি না আমরা নিশ্চিত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা সিস্টেমে শত শত, হাজার হাজার অপারেশন হয়। সেখানে একটা জায়গায় Error আসছে। এটা তো টেকনোলজিক্যাল সমস্যা। প্রথমে আমরা ভেবেছি টেলিটকের ভুল, পরে এনালাইসিস করে দেখি আমাদের ভুল।
‘আমি ইউনিট কমিটিকে বলেছি, ছাত্ররা যাতে বঞ্চিত না হয়। আমরা মেধাতালিকা সংশোধন করতে বলেছি। আমরা পরশু দিন তাদের রিপোর্ট করেছি।’
তিনি জানান, শুধু যশোর বোর্ডের এসএসসি ডেটায় ভুল হয়েছে। দশমিক এর পর দুই ডিজিট না ধরে এক ডিজিট কাউন্ট করা হয়েছে। বাকি সব বোর্ড ঠিক আছে। টেলিটক যদি প্রথমবার কারেক্ট ডেটা দিত- এমনটা হতো না বলেও মনে করেন তিনি।
দেরিতে জানানোর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমার চোখে পড়েছে অভিযোগ দেয়ার পর। আগে জানলে তো আমরা সংশোধন করেই দিতাম। এটি যেহেতু সময় থাকতে নজরে এসেছে, তাহলে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিক।’