বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাবিতে ছাত্র পিটিয়ে ছয় ছাত্রলীগ কর্মীর ক্ষমা প্রার্থনা

  •    
  • ২২ আগস্ট, ২০২২ ১৭:৩০

যখন আমাদের বন্ধু মারুফকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়, তখন আমাকে একজন ফোন দিয়ে বলে মারুফকে মারা হচ্ছে। এ জন্য আমরা সেখানে গেছি। ভুল-বোঝাবুঝির কারণে ওনাদের ওপর হামলা করি। আমরা এটার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে আর এ রকম হবে না: ছাত্রলীগ কর্মী

প্রতিপক্ষের ওপর হামলার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের দুই কর্মীকে পিটুনির দায় স্বীকার করার পাশাপাশি ক্ষমা চেয়ে ছাত্রলীগের ছয় কর্মী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা আর কখনও হবে না।

যারা ক্ষমা চেয়েছেন, তারা বলেছেন, যে হামলা হয়েছে, সেটার জন্য তারা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। তারা ভুল-বোঝাবুঝি থেকে এই কাজ করেছেন যার দায় সংগঠনের নয়।

সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে হামলায় সন্দেহভাজন ছাত্রলীগ কর্মীদের পক্ষ থেকে একজন ভুক্তভোগী দুইজন প্রতিনিধির কাছে ক্ষমা চান।

সে সময় অন্য সন্দেহভাজনরাও উপস্থিত ছিলেন।

ছয় ছাত্রলীগ কর্মী হলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তানজিল তুষার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের হেদায়েত উল্লাহ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ইত্তেজা হোসেন রাকীব, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের আবদুল্লাহ আল মাসরুর রুদ্র, ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার বিভাগের সুমন আলী ও রোকনুজ্জামান রোকন।

এদের মধ্যে তুষার এবং হেদায়েত ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আর বাকিরা ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।

রোকন ছাড়া বাকি সবাই কবি জসিম উদ্‌দীন হল ছাত্রলীগের কর্মী। রোকন এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের কর্মী।

ছাত্র অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন এবং স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট টর্চার (স্যাট) প্ল্যাটফর্মের প্রচার সম্পাদক আনাস বিন মনির উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্রলীগ কর্মীদের পক্ষ থেকে কথা বলেন কবি জসিম উদ্‌দীন হল ছাত্রলীগ কর্মী ইত্তেজা হোসেন রাকিব।

সেদিনের হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যখন আমাদের বন্ধু মারুফকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয় তখন আমাকে একজন ফোন দিয়ে বলে মারুফকে মারা হচ্ছে। এ জন্য আমরা সেখানে গেছি। ভুল-বোঝাবুঝির কারণে ওনাদের ওপর হামলা করি। আমরা এটার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে আর এ রকম হবে না।’

তিনি বলেন, ‘এর দায় সম্পূর্ণ আমাদের, ছাত্রলীগের নয়। ছাত্রলীগ থেকে আমাদের আদেশ করা হয়নি, আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে এখানে এসেছি।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বলেন, ‘এটি একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং ক্ষমা চেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্র অধিকার পরিষদ কোনো প্রতিশোধপরায়ন সংগঠন না। যারা হামলা করেছে তারাও আমাদের ভাই। আমরা তাদের মাফ করে দিয়েছি। আশা করছি ভবিষ্যতে তারা তো নয় বরং কোনো ছাত্রলীগ কর্মী ক্যাম্পাসের কোনো শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন করবে না।'

স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট টর্চার (স্যাট) প্ল্যাটফর্মের পক্ষে আনাস বিন মনির বলেন, ‘আমাদের দুইজনকে মারধরের ঘটনায় আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে অভিযুক্তরা এটি নিয়ে সমঝোতায় আসতে চেয়েছে। তারা এটি নিয়ে অনুতপ্ত। তাই আমরা মামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি।’

যা ঘটেছিল

গত বুধবার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মেসেঞ্জার গ্রুপ চৌদ্দশিখায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

সেদিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ চলছিল।

আলোচনায় এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘আজকে কীসের মিটিং? এত মিছিল কেন?’

আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে সংগঠিত দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ।’

তখন মেফতাহুল মারুফ নামে এক ছাত্র লেখেন, ‘সিরিজ বোমা হামলা চালাইছে জামায়াতুল মুজাহিদিন নামে একটা জঙ্গি সংগঠন বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে। সেই সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত। এই ক্ষমতায় থাকার জন্য যদি দায়ী তারা হয়, তাহলে ২০০৮ থেকে বর্তমানে গুলশানসহ সকল জঙ্গি হামলার জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ।’

গত বৃহস্পতিবার ছাত্র অধিকার পরিষদের দুইজনের ওপর হামলার পর তাদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়

এই ঘটনার পর মারুফকে রাষ্ট্রবিরোধিতার অভিযোগে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন।

এই ঘটনাটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করলে তারা পরদিন সকালে থানার সামনে জড়ো হন। পরে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসনীম আরেফা সিদ্দিকী বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল ইসলামকে থানায় পাঠান।

আইনুল ইসলাম শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদূত হাওলাদারের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। পরে মওদূত সংবাদকর্মীদের মারুফের লেখাটি পড়ে শুনিয়ে বলেন, ‘আমরা যাচাই করে দেখেছি, এটি তার (মারুফ) ব্যক্তিগত মতামত। যে কেউ যেকোনো প্ল্যাটফর্মে সরকারের সমালোচনা করতেই পারে। আর তার লাইক দেয়া পেজগুলোতে তার কোনো রিঅ্যাক্ট বা কমেন্ট পাইনি।’

ঘটনাটি সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু হয়নি।

মারুফকে নিয়ে ফেরার সময় ছাত্র অধিকার পরিষদের দুই কর্মীকে পেটানো হয়। তারা হলেন স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট টর্চার সেল (স্যাট) প্ল্যাটফর্মের হেড অফ ডিরেক্টর সালেহ উদ্দীন সিফাত এবং অন্যজন প্ল্যাটফর্মটির হেড অফ ডকুমেন্টেশন আহনাফ সাইদ খান।

এই প্ল্যাটফর্মটি মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ক্যাম্পাসের সংগঠিত সমস্ত নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত করে। এবং নির্যাতনের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পক্ষে কথা বলে।

শুরু থেকেই অভিযোগ উঠেছিল ছাত্রলীগের এই ছয় কর্মীর বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীরা জানান, অভিযুক্তদের মধ্যে তানজির আরাফাত তুষার এবং হেদায়েতুল ইসলাম সবচেয়ে বেশি মারধর করেন।

তবে হেদায়েতুল ইসলাম সেদিন বলেন, ‘এটি মিথ্যা কথা। আমি সেখানে ছিলাম না। আমি তখন নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছিলাম। কেউ আমার নামে ভুয়া এই তথ্য ছড়াচ্ছে।’

তানজির আরাফাত তুষার বলেন, ‘আমি জুমার নামাজ পড়েছি মোহাম্মদপুরে। সেখান থেকে ফিরেছি একটু আগে। আমি সেই ঘটনায় ছিলাম না।’

এ বিভাগের আরো খবর