বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাল্টে গেল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড

  •    
  • ১৬ আগস্ট, ২০২২ ২১:৩৬

বিদায়ী ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের অনেকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ লোপাট, জঙ্গিবাদ বিস্তারে ভূমিকা রাখা, যৌন হয়রানি, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ছিল। এসব কারণে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড ঢেলে সাজানো হয়েছে। পুরাতন ও বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে নতুন ট্রাস্ট্রি বোর্ড গঠন করে একটি আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিদায়ী ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের অনেকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ লোপাট, জঙ্গিবাদ বিস্তারে ভূমিকা রাখা, যৌন হয়রানি, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এসেছে। এসব কারণে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করা হলো।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুসারে এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ১২ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড নতুন করে গঠন করে মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করে।

এ আদেশের মাধ্যমে মূলত বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানায় বড় ধরনের পরিবর্তন এলো। দেশের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এ ধরনের সিদ্ধান্ত এবারই প্রথম।

নতুন ট্রাস্টি বোর্ডে উদ্যোক্তা ট্রাস্টি হিসেবে আছেন টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এ কালাম, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়্যারম্যন ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম কামাল উদ্দিন, আবুল খায়ের গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবুল কাশেম, মিনহাজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ইয়াসমিন কামাল, বেক্সিমকো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আহমেদ সোহেল ফসিউর রহমান ও ইউনাইটেড ফসফরাস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফৌজিয়া নাজ।

নতুন ট্রাস্টি বোর্ডে শিক্ষাবিদ হিসেবে আছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম। আর উদ্যোক্তা ট্রাস্টির উত্তরাধিকারী হিসেবে বোর্ডে আছেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সিনিয়র ইকনোমিস্ট ড. জুনাইদ কামাল আহমাদ, ইনকনট্রেড লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর হারুন, উদ্যোক্তা জাভেদ মুনির আহমেদ, ফাইজা জামিল ও শীমা আহমেদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি কেনায় অর্থ আত্মসাতের মামলায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রভাবশালী চার ট্রাস্টি সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহানকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে আদালত। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন করতে পারেন। অথচ প্রতি মাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাবদ প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়।

সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) কিছু সদস্য ও অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকালাপ, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িত বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে প্রমাণিত হয়, যা দেশের প্রচলিত আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিওটির চারজন সদস্য জমি কেনায় আর্থিক দুর্নীতি করায় দুদকের মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে বর্তমানে কারাবন্দি রয়েছেন। তা ছাড়া ট্রেজারার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারি নথি জালিয়াতির ঘটনায় একজন ট্রাস্ট্রির বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজে অন্তর্ভুক্ত থাকা সমীচীন নয় বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালনা করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা ও পরিচালনা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং সরকারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সম্মিলিত সভার সুপারিশ বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর উদ্যোক্তা ট্রাস্টি ও উদ্যোক্তা ট্রাস্টির উত্তরাধিকারীদের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করা হয়েছে।

সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে দেশের অন্যতম শীর্ষ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পর্ষদ থেকে বাদ পড়লেন প্রভাবশালী সদস্য আজিম উদ্দিন আহমেদ, রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাজাহান ও বেনজীর আহমেদ। তারা প্রত্যেকেই একাধিকবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এই পাঁচ সদস্য গত দেড় দশক ধরে ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকের ভূমিকায়। তাদের মেয়াদে জমি কেনার নামে অর্থ আত্মসাৎ, বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় গাড়ি ও ভ্রমণবিলাস, অবৈধভাবে মোটা অংকের সিটিং অ্যালাওয়েন্স গ্রহণের মতো বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটে নর্থ সাউথে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টিদের অনিয়ম তদন্ত করতে গিয়ে জমি কেনা বাবদ কয়েকশ কোটি টাকার অনিয়ম খুঁজে পায় দুদক।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের জমি কেনায় অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে গত ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঁচ ট্রাস্টিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ পাঁচ ট্রাস্টি হলেন- আজিম উদ্দিন আহমেদ, রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ। আর বাকি একজন হলেন আশালয় হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।

এ মামলায় জামিন চেয়ে গত ২২ মে আদালতে হাজির হলে চার ট্রাস্টিকে শুরুতে পুলিশের হেফাজত এবং পরে কারাগারে পাঠায় আদালত। তারা এখনও জামিন পাননি।

১৯৯২ সালে দ্য নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট গঠনকালে এর সদস্য সংখ্যা ছিল ২৩। এর মধ্যে ১৬ জন ছিলেন ‘প্রতিষ্ঠাতা আজীবন সদস্য’। আর বাকি সাত জন সাধারণ সদস্য। ট্রাস্ট ডিড অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠাতা আজীবন সদস্যদের মৃত্যুর পর তাদের উত্তরসূরী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি হবেন। আর সাধারণ সদস্যদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর তাদের সদস্যপদ থাকবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, বিওটিতে সদস্য সংখ্যা ১৫। এছাড়া উপাচার্য আইনি ক্ষমতাবলে বিওটির সদস্য।

ট্রাস্টি বোর্ডে আকস্মিক এ পরিবর্তন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান জামিল আহমেদের মোবাইল ফোনে কল করে এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ বিভাগের আরো খবর