ভাষা অস্পষ্ট, ভাব বিনিময় করতে হয় চোখের ইশারায়। দুই হাত অবশ থাকায় লিখতে হয় পা দিয়ে। তবুও পড়ালেখা করতে মনের জোরে কোনো কমতি নেই। পায়ে লিখেই স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন সুরাইয়া।
সুরাইয়ার বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার আন্দারিয়া সুতিরপাড় গ্রামে। সফির উদ্দিন ও মুরশিদা সফির তিন মেয়ের মধ্যে সুরাইয়া সবার বড়। সুরাইয়ার বাবা স্কুলশিক্ষক আর মা গৃহিণী।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় শনিবার অংশ নেন সুরাইয়া।
সুরাইয়া নিউজবাংলাকে জানান, পড়ালেখা তার অনেক ভালো লাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে দেশসেবায় কাজ করতে চায় সে। এ লক্ষ্যে শেরপুর জেলার চর কান্দারিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৪.১১ এবং শেরপুর মডেল গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৪.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাননি। তাই এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি।
সুরাইয়ার মা মুর্শিদা সফি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেয়েটা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী হলেও আমি কখনোই মন খারাপ করিনি। মেয়েকে নিয়ে আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনের গল্পটা সংগ্রামের। আমি চাই যতদিন আমি বেঁচে আছি ততদিন তার এগিয়ে যাওয়ার পথে সঙ্গী হয়ে থাকব। আমার আশা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে এক দিন বড় অফিসার হয়ে দেশের সেবায় মনোনিবেশ করবে সুরাইয়া।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘সুরাইয়ার দুটি হাতই বাঁকা ও শক্তিহীন। ঘাড়ও খানিকটা বাঁকা। সে মাথা সোজা করে দাঁড়াতেও পারে না। দেখেই বোঝা যায় হাত দিয়ে কোনো কাজ করতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘সুরাইয়ার জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০ মিনিট সময় বেশি দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন চুপচাপ থেকে শান্তভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে সুরাইয়া।’