কোনোদিন আবাসিক হলে ছিলেন না, তারপরও বছরে তিন হাজার টাকা করে দুই বছরে ছয় হাজার টাকা দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজন ছাত্র।
তারা বলছেন, তাদের প্রায় ৫০ জন বন্ধুও এই ঘটনার শিকার। দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফরম পূরণের শেষ দিন কাছাকাছি চলে আসায় অনেকে বাধ্য হয়ে এসব টাকা পরিশোধ করেছেন। আবার কেউ অতিরিক্ত এই টাকা জোগাড় করতে না পারায় ফরম পূরণ করতে পারছেন না। আবার ফরম পূরণ করতে না পারলে চলতি মাসের শেষে দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
নর্থ হলে অ্যাটাচড নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘করোনাকালে আমাদেরকে যখন টিকার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে তখন আমরা দ্রুত টিকা পাওয়ার জন্য অনাবাসিক হয়েও ‘আবাসিক’ হিসেবে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। এর কয়েক মাস পর আমরা প্রথম বর্ষে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ফরস পূরণ করেছি। অনাবাসিক হয়েও ‘আবাসিক’ দেয়ায় তখন কিন্তু আমাদের হল ফি দিতে হয়নি।
‘কিন্তু এখন দ্বিতীয় বর্ষে এসে যখন চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করতে গিয়ে দেখি দুই বছরের হল ফি হিসেবে ছয় হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ আমরা একদিনের জন্য হলে থাকিনি।’
সেই ছাত্র জানান, তারা প্রাধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেছেন, তাদের কিছু করার নেই। টাকাটা দিতে হবে।
সেই ছাত্র জানান, অনেক অনুরোধ করার পর প্রাধ্যক্ষ তাদেরকে বলেন, এক বছরের ফি তিন হাজার টাকা দিলেও চলবে।
এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের এখানে সিস্টেম হচ্ছে হল ফি জমা দেয়ার ২৪ ঘণ্টা পর ভর্তি ফি জমা দেয়া যায়। এর ২৪ ঘণ্টা পর ফরম পূরণ করতে পারে। আর আগামী ৪ তারিখ ফরম পূরণের শেষ দিন হওয়ায় প্রায় সবাই অতিরিক্ত এই হল ফি দিয়েই ফরম পূরণ করে ফেলেছে।’
দক্ষিণ ছাত্রাবাসের অ্যাটাচড আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের হলে না থেকেও টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ আমার অনেক বন্ধু হলে থাকে। কিন্তু তাদের কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না। এটা প্রহসন।’
নিজের নাম সোহান উল্লেখ করে আরেক ছাত্র বলেন, ‘ফরম পূরণ করতে গিয়ে দেখি দুই বছরের আবাসিক ফি হিসেবে আমাদের ছয় হাজার টাকা দিতে হবে। এ বিষয়ে বিভাগে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে বলা হয় অধ্যক্ষ স্যারের কাছে যেতে। সেখানে গেলে তিনি হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
‘এরপর আমরা আবেদন নিয়ে হল প্রাধ্যক্ষ স্যারের কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘তোমরা হলে থাক। না থাকলে লিস্টে নাম আসত না। যেহেতু এখানে তোমাদের নাম এসেছে তাই তোমাদের হল ফি পরিশোধ করতে হবে।’
সেই ছাত্র জানান, তিনি প্রাধ্যক্ষকে বলেন, তিনি হলে থাকতেন না। থাকলে নিশ্চয় প্রাধ্যক্ষ তাকে চিনতেন।
এরপর প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘আমার হলে সিট আছে ৩৫০টা। কিন্তু শিক্ষার্থী থাকে ৭০০ জন। এখন তুমি ছিলে কি না সেটি তো আমি বলতে পারছি না। তোমার মতো অনেকেই হলে থেকেও ছিল না।’
এরপর সেই ছাত্র বলেন, যেতেহু ২২৩ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে তার নাম এসেছে, তাই সেই কক্ষের যারা থাকে তাদেরকে ডেকে যেন প্রাধ্যক্ষ তার কথা জানতে চান।
এরপর প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘অনেকে হলে থেকেও টাকা দেয় না। আবার অনেকের হলে না থেকেও টাকা দেয়া লাগে। তোমরা সিস্টেমে পড়ে গেছ। এখন কিছু করার নেই।’
সোহান বলেন, ‘৪ আগস্ট ফর্ম পূরণের শেষ তারিখ। এখন পর্যন্ত ফরম পূরণ করতে পারিনি। আমার পরিবারের আয় কম। অতিরিক্ত এই ছয় হাজার টাকা জোগাড় করা আমার পক্ষে সম্ভব না। জানি না এখন কী হবে।’
তবে অভিযোগের বিষয়ে উত্তর ছাত্রাবাসের প্রাধ্যক্ষ ওবায়দুল করিম বলেন, ‘টিকার রেজিস্ট্রেশনের সময় তারাই তো বলেছে, তারা হলে থাকে। সুতরাং হলে না থেকেও টাকা দিতে হচ্ছে এই তথ্য সঠিক না।’
টিকার রেজিস্ট্রেশনের তথ্যের ভিত্তিতে আবাসিক/অনাবাসিক নির্ধারণ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, হলের লিস্টে যাদের নাম আছে তাদেরকে আবাসিক ধরে টাকা নেয়া হচ্ছে।’
এই বিষয়ে আরও কিছু জিজ্ঞাসার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে সরাসরি হোস্টেল কমিটির সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন।
ঢাকা কলেজের শহীদ ফরহাদ হোসাইন হলের প্রাধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের হলের কোনো শিক্ষার্থী এ রকম অভিযোগ করলে আমরা যাচাই বাছাই করে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থী সত্য কথা বলে না। টাকা না দিতে হলে থাকার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আজকে রাতে আমাদের হল প্রধানদের সভা আছে। শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে সেখানে আমরা আলোচনা করে যাচাই বাছাই করে কালকে সিদ্ধান্ত জানাব।’
ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এটিএম মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘হল সুপাররা সিদ্ধান্ত নেবেন কে হলে ছিল আর কে হলে ছিল না। কারা হলে থাকে আর কারা থাকে না সেটা হল সুপাররাই জানে। তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’