বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভর্তি পরীক্ষা দিলেন সেই তামান্না

  •    
  • ৩০ জুলাই, ২০২২ ২০:০২

জন্মগতভাবে দুই হাত ও এক পাহীন অদম্য মেধাবী তামান্নার পাবলিক পরীক্ষার সাফল্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা ফোন করে খোঁজখবর নেন। একই সঙ্গে তামান্নার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসেন তারা। তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থাও করেছিলেন জাতির জনকের দুই কন্যা।

জন্মগতভাবেই দুই হাত ও এক পাবিহীন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সেই তামান্না আক্তার নুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। শনিবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অ্যাকাডেমিক ভবনের কেন্দ্রীয় গ্যালারিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।

তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির সন্তান। অদম্য এই তরুণী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সবক’টি পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শুধু একটি পা দিয়ে লিখেই জিপিএ-৫ পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন।

অদম্য মেধাবী তামান্নার এই সাফল্যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা খোঁজখবর নেন। একই সঙ্গে তারা দুই বোন তামান্নার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসেন। তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থাও করেছিলেন জাতির জনকের দুই কন্যা।

তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে তামান্না খুব মেধাবী। নিজের ইচ্ছাশক্তির জোরেই সে এই জায়গায় এসেছে। সবক’টি পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার স্বপ্ন গবেষণাধর্মী কোনো বিষয়ে লেখাপড়া করে বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকুরে হওয়া।

‘স্বপ্ন পূরণে কয়েক মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল তামান্না। দুর্ভাগ্য, সেখানে ওর চান্স হয়নি। শনিবার যবিপ্রবিতে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলে সে জানিয়েছে।’

যবিপ্রবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অ্যাকাডেমিক ভবনের কেন্দ্রীয় গ্যালারিতে ভর্তি পরীক্ষায় পা দিয়ে লিখছেন তামান্না। ছবি: নিউজবাংলা

এক প্রশ্নের উত্তরে রওশন আলী বলেন, ‘আমি একটি নন-এমপিওভুক্ত দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। সংসার চালাতে টিউশনও করতে হয়। আমার পক্ষে জেলার বাইরে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বহন করা সম্ভব হয়ে উঠবে না।

‘মেয়েটা যেখানেই লেখাপড়া করবে ওর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদেরও থাকতে হবে। কোনো একজনের সহযোগিতা ছাড়া সে কিছু করতে পারে না। তাই মেয়েরও ইচ্ছা, বাড়ির কাছে নিজ শহরে যবিপ্রবিতে লেখাপড়ার করার।’

যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা খবর পেয়েছি যে সারা দেশে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষাটি অত্যন্ত সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। যবিপ্রবি কেন্দ্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করেছি।’

তামান্না আক্তার নুরার জন্ম ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ পড়ে প্রথম শ্রেণিতে। ছয় বছর বয়সে তামান্নাকে পায়ে কাঠি দিয়ে লেখানোর চেষ্টা করে তার পরিবার। মেয়ের প্রবল ইচ্ছাশক্তি দেখে বাঁকড়া আজমাইন এডাস স্কুলে ভর্তি করে দেন মা-বাবা।

স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর দুই মাসের মাথায় তামান্না পা দিয়ে লিখতে শুরু করেন। এরপর ছবি আঁকা শুরু করেন। নিজের আঁকা বেশ কিছু ছবি ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছেন তামান্না।

গত বছর এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন তামান্না। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ও সন্ধ্যায় পৃথক দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে ফোন দিয়ে তামান্নাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। একই সঙ্গে দুই বোন তামান্নার স্বপ্ন পূরণে যেকোনো সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করার পরামর্শ দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তামান্নাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরবর্তী সময়ে দেশের বাইরে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে তামান্নার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল টিম।

এ বিভাগের আরো খবর