জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ভর্তির সাত মাস পেরিয়ে গেলেও প্রথম বর্ষের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীকে এখনও পরিচয়পত্রের (আইডি কার্ড) মূল কপি দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
আইডি কার্ডের সফট কপি দেয়া হলেও মূল কপি না পাওয়ায় বিভিন্নভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীকে। নতুন টিউশনি পেতে স্টুডেন্টদের অভিভাবকদের আইডি কার্ড দেখাতে পারছেন না জবি শিক্ষার্থীরা। এতে অনেকের টিউশনি হাতছাড়া হচ্ছে। যাতায়াতের সময় গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া দেয়ার জন্য আইডি কার্ড দেখাতে পারছেন না তারা। এ ছাড়া আইডি কার্ড সঙ্গে না থাকায় রাস্তায় পুলিশের সন্দেহের কবলে পড়তে হচ্ছে অনেককে।
শিক্ষার্থীরা জানান, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রায় ছয় মাস আগে ২০২০-২০২১ সেশনে ভর্তি হয়। এরই মধ্যে অনেক বিভাগে প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ হলেও তাদের আইডি কার্ড সরবরাহ করা হয়নি। প্রথম বর্ষ শেষ করে দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার সময় ঘনিয়ে এলেও আইডি কার্ড হাতে না পাওয়ায় হতাশ শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড প্রিন্টের কাজ আগে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে করা হতো। এখন আইটি সেলকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা রেজিস্ট্রারের অনুমতি ছাড়া কাজটি করতে পারবে না। তবে এরই মধ্যে আইডি কার্ড প্রিন্টের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদের মধ্যে শুধুমাত্র কলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা আইডি কার্ডের হার্ড কপি হাতে পেয়েছেন বলে জানা যায়।
এদিকে আইটি সেলে বর্তমানে বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড প্রিন্টের কাজ চলছে বলে জানা গেছে। একটি বিভাগের কাজ শেষ হলে তা পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা। একে একে বাকি অনুষদগুলোর কার্ড প্রিন্ট করা হবে বলেও আইটি সেল থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া দুটি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীও আইডি কার্ডের হার্ড কপি বুঝে পাননি।
এদিকে গত দুই মাস আগে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডের সফট (অনলাইন) কপি তাদের স্ব স্ব স্টুডেন্ট পোর্টালে ইতোমধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ছাড়া অন্য কোথাও এটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সাফা কবির নোলক বলেন, ‘আইডি কার্ড না থাকায় আমি যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তার কোনো পরিচয়ও বাইরে দিতে পারি না। কবে পাব তাও জানা নেই।’
গণিত বিভাগের মেহেদী হাসান বলেন, ‘আইডি কার্ড না থাকায় বাসে হাফ পাস দিতেও সমস্যা হয়। আমাকে জবির শিক্ষার্থী হিসেবে কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। সফট কপি প্রিন্ট করে লেমিনেটিং করার পরও তারা মানতে চায় না।’
আইডি কার্ড না পাওয়ায় নতুন শিক্ষার্থীরা নানান ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, দূর গন্তব্য থেকে বাসায় ফেরার সময় রাস্তায় পুলিশ বাহিনীর সন্দেহের কবলে পড়তে হয়। কয়েক মাস আগে এক বন্ধু টিউশনি করিয়ে রাত সাড়ে ১০টায় মেসের উদ্দেশে রওনা হলে ধূপখোলা এলাকায় পুলিশি হয়রানির শিকার হন আইডি কার্ড না থাকায়। পরে একজন শিক্ষককে কল করে নিশ্চিত করতে হয় তিনি জবির শিক্ষার্থী।
তিনি আরও জানান, নতুন টিউশন নিতে গেলে স্টুডেন্টদের অভিভাবক আইডি কার্ড দেখতে চাইলে সেখানেও সম্ভব হয় না৷ যার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর টিউশনি হাত ছাড়া হচ্ছে।
এ ছাড়া রাস্তায় যাতায়াত করার সময় বাসে অর্ধেক ভাড়া দেয়ার জন্য আইডি কার্ড দেখাতে বললে দেখাতে পারি না আমরা নতুন বর্ষের শিক্ষার্থীরা, যার কারণে সেখানে সৃষ্টি হয় বাগ্বিতণ্ডার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি, অতি দ্রুত নতুন শিক্ষার্থীদের মাঝে আইডি কার্ড দেয়া হোক এসব হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইডি কার্ড প্রিন্ট করা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই সব শিক্ষার্থীর হাতে আইডি কার্ড তুলে দিতে পারব।’