রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ‘মারধরের’ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
নিউজবাংলাকে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন উইং) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের যে অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত করার জন্য মাউশির রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. কামাল হোসেনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরী ৭ জুলাই রাতে রাজশাহী নগরীতে নিজ কার্যালয়ে কলেজ অধ্যক্ষকে কিল, ঘুষি ও হকিস্টিক দিয়ে পেটান বলে অভিযোগ ওঠে। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গত ১৩ জুলাই।
ওই ঘটনার পর অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বিষয়টি নিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন, কিন্তু রহস্যজনক কারণে একপর্যায়ে তিনি মুখ বন্ধ করে ফেলেন। অনেকটা গা ঢাকা দেন তিনি। দুই দিন ধরে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না।
ফোনে কিংবা সরাসরি কোনো বক্তব্য না দিয়ে বুধবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের মন্তব্য দেন অধ্যক্ষ।
গত ১৪ জুলাই এমপি ফারুক চৌধুরীর সঙ্গেই সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন সেলিম রেজা। রাজশাহী নগরীর থিম ওমর প্লাজার পাশে ওমর ফারুক চৌধুরীর নিজস্ব কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ওমর ফারুক চৌধুরী দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। এতে তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সম্মানহানি হয়েছে।
ওমর ফারুক বলেন, ‘৭ জুলাই রাতে কোনো কলেজশিক্ষককে আমি মারধর করিনি। এটা মিথ্যা কথা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমাকে হেয় করার জন্য এমন তথ্য প্রচার করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বসেছিলেন অভিযুক্ত ওমর ফারুক চৌধুরীর পাশেই। তিনিও দাবি করেন, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী তাকে মারধর করেননি।
সেলিম রেজা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘গণমাধ্যমে যেভাবে বলা হচ্ছে যে, সংসদ সদস্য আমাকে মারধর করেছেন, তা ঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আমরা কয়েকজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ঈদ উপলক্ষে এমপি সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এ সময় অধ্যক্ষ ফোরামের কমিটি গঠন এবং অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে এমপি মহোদয় আমাদের নিবৃত্ত করেন। এ ছাড়া অন্য কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
মারধরের শিকার না হলে ঘটনার রাতে চিকিৎসকের কাছে কেন গেলেন, অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল। তাতে সামান্য জখম হয়েছে।’
‘আমরা শুনেছি আপনার হাতে কনুইয়ের কাছে বড় জখম হয়েছে। কতটা জখম হয়েছে তা একটু দেখাবেন কি?’—এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম রেজা তা দেখাতে অস্বীকৃতি জানান।
এমপি না মেরে থাকলে তাকে কে মেরেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আবারও বলেন, ‘সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে।’
ওই সময় তার পাশে বসা গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল আউয়াল রাজু অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ধাক্কা মারার দায় নিজের কাঁধে নেন।
এমপি ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ রাজু বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে অধ্যক্ষ ফোরামের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমিই সব অধ্যক্ষকে ফোন করে ডাকি। সেখানে ফোরামের কমিটি গঠন এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে আমি অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ধাক্কা দিই। এ সময় সেখানে থাকা আলমারি ও চেয়ারে ধাক্কা খেয়ে সেলিম রেজা আহত হন।’
এমপি তাদের থামিয়েছেন বলে দাবি করেন রাজু। একজন এমপির সামনে শিক্ষকদের এমন আচরণের জন্য তিনি ক্ষমা চান।