একাত্তরের ধারাবাহিকতায় শিক্ষকরা আজও মৌলবাদীদের হাতে নিগৃহীত ও নিপীড়িত বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
সোমবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিধির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।
দীপু মনি বলেন, ‘একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীরা জাতিকে মেধাশূন্য করতে শিক্ষকদের খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজও শিক্ষকরা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীরা মৌলবাদীদের হাতে নিগৃহীত ও নিপীড়িত হচ্ছেন। শিক্ষক নিপীড়নের এই ঘটনাগুলো পরিকল্পিত।’
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর ফেসবুকে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-সহিংসতা চলে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় যে ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
অন্য ঘটনায় ২৭ জুন এক শিক্ষার্থীর আঘাতে প্রাণ হারান সাভারের আশুলিয়ায় কলেজশিক্ষক উৎপল কুমার সরকার।
এছাড়াও সম্প্রতি রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়েও অনুষ্ঠানে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, ‘আমাদের দেশের একটি গোষ্ঠী নিজেদের পছন্দ ও বিশ্বাস অন্যের ওপর জোর করে চাপিয়ে দিতে সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যা সংঘটিত করছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘কিছু মানুষ আছে যারা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো করছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের মনোজগতে পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে যারা আইন প্রয়োগ করেন। নতুন শিক্ষাক্রমে আমরা শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।’
ওয়েবিনারে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ‘ভিকটিমদের বক্তব্য শুনে বুকটা ভেঙে গেছে। সবাই একভাবে থাকতে না পারলে আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। শঙ্কর দেবনাথ, জয়দেব ও হৃদয় চন্দ্রের ওপর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর ভূমিকায় আমি হতাশ। তাদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়া দরকার ছিল।’
সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দিতে আইনজীবীদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। সরকারকেও বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে।’
শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিকর্মী অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের শিক্ষক নিপীড়ন, নির্যাতন, অসম্মান ও হত্যা বস্তুত সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত প্রকাশ।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ব্রিটিশ মানবাধিকার নেতা কলামিস্ট জুলিয়ান ফ্রান্সিস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজির বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)সহ অনেকে।