বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাবিতে কষ্ট পেলেও থামছেন না বেলাল

  •    
  • ৫ জুলাই, ২০২২ ১৭:৪৮

‘অনেক স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার। তবে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। আমার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট তো আমাকে পোড়াবেই। সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব। আশা করি, দেশের যেকোনো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সুযোগ পাব।’

৫৫ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আলোড়ন তৈরি করা বেলায়ত হোসেনকে নিরাশ হতে হলো। পরীক্ষায় পাস করতে না পারায় কষ্টে আছেন তিনি। তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না, দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবেন। আশা, কোথাও না কোথাও ভর্তির সুযোগ মিলবে।

বেলায়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অংশ নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে এই ইউনিটের ফল প্রকাশ হয়। এতে দেখা যায়, তিনি পাস করতে পারেননি। আর যে নম্বর পেয়েছেন, তাতে তিনি আরও বেশি হতাশ হয়েছেন।

গত ১১ জুন পরীক্ষা দেয়ার পর বেলায়েত জানিয়েছিলেন পরীক্ষা ভালো হয়েছে। এত বয়সে এর আগে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তির চেষ্টা করেনি।

তবে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ৬০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক অংশে বেলায়েত পেয়েছেন ৮ । এমসিকিউতে ফেল করায় তার লিখিত অংশের খাতা মূল্যায়নের জন্যে বিবেচিতই হয়নি।আট নম্বরের মধ্যে নৈর্ব্যক্তিক অংশের বাংলায় ২, ইংরেজিতে ২.৭৫ এবং সাধারণ জ্ঞান অংশে পেয়েছেন ৩.২৫ নম্বর।আর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জিপিএসহ সর্বমোট নম্বর পেয়েছেন ২৬ দশমিক ২।

বেলায়েত বাংলা অংশের নৈর্ব্যক্তিকে মোট ১২টি প্রশ্নের উত্তর দেন। এর মধ্যে আটটি প্রশ্নের উত্তরই ছিল ভুল। ইংরেজিতে নয়টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সেখানে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর তার ঠিক হয়নি।সাধারণ জ্ঞান অংশে দেয়া ১২টি প্রশ্নের মধ্যে তিনি সাতটি প্রশ্নেরই ভুল উত্তর দিয়েছেন।

বেলায়েত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার। তবে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। আমার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট তো আমাকে পোড়াবেই।’

নম্বর প্রত্যাশার চেয়ে কম এসেছে এবং এটা আরও বেশি পোড়াচ্ছে বেলায়েতকে। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা ভালোই দিয়েছিলাম। তবে এত কম নম্বর পাব তা ভাবিনি। আশা করেছিলাম পাস করব। তবে সেটাও হলো না। অনেক খারাপ লাগছে। আমার ভাগ্যটাই ভালো না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হতাশ হলেও থেমে থাকবেন না বলে জানিয়েছেন বেলায়েত। আসলে তিনি থেমে থাকার মানুষও নন।তিনি বলেন, ‘সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব। আশা করি, দেশের যেকোনো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সুযোগ পাব।’

বেলায়েতের জীবন কাহিনি বলে তিনি এগিয়ে যেতে চান।আর্থিক দুরবস্থা ও বাবার অসুস্থতার কারণে ১৯৮৩ সালে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়া থেকে ছিটকে যান বেলায়েত। হাল ধরতে হয় সংসারের।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার পর প্রথমে ভাই বোন ও পরে সন্তানদেরকে দিয়ে চেষ্টা করেন বেলায়েত। কিন্তু তারাও পারেনি। এরপর বয়স ৫০ পেরিয়ে যাওয়ার পর আবার পড়াশোনা শুরু করেন তিনি।২০১৭ সালে ঢাকার বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদরাসা থেকে ৪ দশমিক ৪৩ জিপিএ নিয়ে তিনি এসএসসি (ভোকেশনাল) পাস করেন। চার বছর পর ২০২১ সালে রামপুরার মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৫৮ পেয়ে পাস করেন এইচএসসি (ভোকেশনাল)।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তিনি।স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বেলায়েতের সংসার। কাজ করেন দৈনিক করতোয়া প্রত্রিকায় গাজীপুরের শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবে।

এ বিভাগের আরো খবর