হাত খরচের জন্য মাসে দেড় লাখ টাকা চেয়ে না পেয়ে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে কয়েক দফা লেগুনা ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
লেগুনা মালিক সমিতির একজন সদস্য এবং নীলক্ষেত লেগুনা স্ট্যান্ডের সুপারভাইজার নিউজবাংলার কাছে এ অভিযোগ করেছেন শুক্রবার। অভিযোগ উঠেছে, গত এক সপ্তায় কয়েক দফায় সাতটি লেগুনা ভাঙচুর, চালকদের মারধর এবং নীলক্ষেত স্ট্যান্ডে লেগুনা দাঁড়াতে দেননি ছাত্রলীগের নেতারা।
সর্বশেষ শুক্রবার বিকেলে ১০-১২ তরুণ লাঠিসোঁটা নিয়ে চারটি লেগুনায় ভাঙচুর চালান এবং চালকদের মারধর করে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা নিয়ে চলে যান বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। নীলক্ষেত থেকে এসব লেগুনা মূলত চকবাজার, খোলামোড়া এবং গুলিস্তান যায়।
অভিযোগ রয়েছে, ১০-১২ দিন আগে সন্ধ্যায় এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক মোনেম শাহরিয়ার মুন হলের পাশে একটি চায়ের দোকানে লেগুনা মালিক সমিতির কয়েকজন নেতাকে চায়ের দাওয়াত দেন। এ দিনই মূলত তারা দেড় লাখ টাকা হাত খরচ দাবি করেন।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মালিক সমিতির সদস্য রফিক। নীলক্ষেত থেকে চকবাজার রোডে তার দুটি লেগুনা রয়েছ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বসার পর হল ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা এখন নতুন কমিটি পাইছি। আমাদের কিছু হাত খরচ দিয়েন।
‘এরপর আমাদের একজন বলেন, কত দিতে হবে ভেঙে বলেন। তখন রিয়াজ ভাই বলেন, দেড় লাখ টাকা দিয়েন। এই কথা শুনে আমাদের সবাই উঠে চলে আসছি। তাদের প্রোগ্রাম থাকায় তারাও চলে যায়। এই ঘটনার চার-পাঁচ দিন তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। তারাও কোনো ঝামেলা করেনি।’
লেগুনা মালিক রফিক আরও বলেন, ‘চার-পাঁচদিন পর এসে তারা গাড়ি ভাঙচুর এবং চালকদের মারধর করা শুরু করেন। স্ট্যান্ডে কোনো গাড়িই তারা রাখতে দেন না।’
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ গত ২৫ তারিখ রিয়াজ ভাই আমাকে ফোন দিয়ে তাদের সঙ্গে বসতে বলেন। বৃহস্পতিবার তাদের সঙ্গে বসার কথা ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ না বসায় তারা শুক্রবার ফের ভাঙচুর চালান। গত এক সপ্তাহে তিন দফায় তারা আমাদের সাতটি লেগুনা ভাঙচুর করেছেন।’
এই লেগুনা মালিক বলেন, ‘এর মধ্যে আবার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ছাত্রলীগের নেত্রীরাও ডিস্টার্ব করা শুরু করছেন। তাদের সামনেই আমাদের গাড়িগুলো চলে। চার-পাঁচ দিন আগে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আমি এবং খোলামোড়া রোডের সভাপতি মানিক ভাই বসেছি।
‘সে সময় তারা বলেছেন, তাদের কলেজের পাশ থেকে ভার্সিটির পোলাপান গাড়ি খেদিয়ে দেবে সেটি তারা হতে দেবেন না। ছাত্রলীগ সভাপতি জয় আল নাহিয়ান খান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে তারা এই ঝামেলা মিটিয়ে দেবেন বলে বলেছিলেন। তবে তাদের দাবি ছিল, আমরা যেন তাদের দেখি। আমরা বলেছি, আপনারা ভার্সিটির ঝামেলাটা বন্ধ করতে পারলে আমরা আপনাদের দেখব। কিন্তু তারা এটি বন্ধ করতে পারেনি।’
এ সব ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে রফিক বলেন, ‘শুনেছি, মালিক সমিতির পক্ষ হয়ে খোলামোড়া রোডের সভাপতি মানিক ভাই এবং ইকবাল ভাই লালবাগ থানার ওসি স্যারকে জানাইছে। এখন বাকিটা জানি না।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি প্রতিবারই কল কেটে দেন।
সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। এই ঘটনার সঙ্গে হল ছাত্রলীগ জড়িত নয়। লেগুনা মালিকদের সঙ্গে আমরা কখনো বসিইনি। এই লেগুনা মালিকদের আমরা চিনিও না। কোনো দিন দেখিনি। কথাও হয়নি।’
লেগুনা মালিক সমিতির সঙ্গে বসেছেন কি না- এমন প্রশ্নে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সভাপতি শারমিন সুলতানা সনি বলেন, ‘আমরা তাদের ডাকিওনি আর বসিওনি।’
কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকলিমা প্রভাতীও বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সার্বিক বিষয়ে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম মোরশেদ বলেন, ‘আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে বিষয়টি আমরা শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’