নড়াইলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা এবং সাভারে শিক্ষক হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক নির্যাতনে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ সমাবেশ হয়।
‘শিক্ষকের গলায় জুতার মালা: নৈতিকতার অবক্ষয় ও সাম্প্রদায়িকতার ছড়াছড়ির শেষ কোথায়’ শীর্ষক সমাবেশে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহাও অংশ নেন।
মিহির লাল সাহা বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমি এখানে বক্তব্য দিচ্ছি, জানি না আমি কতটুকু নিরাপদ। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করছি। কারণ আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী। সনাতন ধর্মের প্রত্যেকটি শিক্ষক আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সাম্প্রদায়িকতাকে যদি শেকড় থেকে তুলে না আনা যায়, তাহলে এই সমসার সমাধান হবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশ হয় পাকিস্তান হবে, নয় আফগানিস্তান হবে। এর সঙ্গে যে কুচক্রী মহল যুক্ত আছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
‘উন্মুক্ত রাস্তায় জনসম্মুখে তাদের বিচার করা উচিত। তাহলেই শিক্ষা হবে।’
মিহির লাল বলেন, ‘বিচারহীনতার সমাজে কখন বিচার হবে? যারা বিচার করবেন, দেখা যায় তারাই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। প্রশাসন বলছে, ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।
‘ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আগে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরাতে হবে। তাদের আগে জুতার মালা পরিয়ে শিক্ষকের সামনে দাঁড় করাতে হবে। এটি হলে বিচারের প্রথম কাজ এগোবে।
'প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, শিক্ষক লাঞ্ছনার দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।'
শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নীরবতার সমালোচনা করে অচিরেই ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার আহ্বান জানান অধ্যাপক মিহির লাল।
সমাবেশে জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সভাপতি কাজল দাস বলেন, ‘যে প্রজন্ম শিক্ষককে জুতার মালা গলায় পরায়, শিক্ষককে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে, সেই প্রজন্মের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে।’
স্বপন কুমার বিশ্বাসকে পুলিশের সামনে জুতার মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ ঘটনার প্রতিবাদ না জানানোর সমালোচনা করে কাজল দাস বলেন, ‘আজকে আমরা লজ্জিত। যেখানে শিক্ষক সমাজ এখানে দাঁড়ানোর কথা, সেখানে আমরা দাঁড়িয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা এই সাম্প্রদায়িকতাকে কখনো মেনে নেয়নি, নেবে না। যেকোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার থাকব।’
জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মন বলেন, ‘শিক্ষকরা জাতির মেরুদণ্ড। স্ট্যাম্পের আঘাতে তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হচ্ছে। আমরা দেখছি, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে নিরীহ শিক্ষক। আজকে তারা মন খুলে পড়াতে পারেন না।
‘মনের ভাব প্রকাশ করতে গেলে, কথিত ধর্ম অবমাননার অপবাদ দিয়ে হয় গণপিটুনি খেতে হয়, নতুবা জেলে যেতে হয়। এই বিষদাঁত আমাদের ভেঙে দিতে হবে।’