বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বপনের গলায় জুতার মালা ‘সব শিক্ষকের অপমান’

  •    
  • ২৭ জুন, ২০২২ ২০:০১

মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক নেতারা। তারা বলছেন, এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে গোটা শিক্ষক সমাজকে অপমান করা হয়েছে।

পুলিশের উপস্থিতিতে নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে ‘গোটা শিক্ষক সমাজের প্রতি অপমান’ হিসেবে দেখছেন শিক্ষক নেতারা। এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া সোমবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাটা আজকেই আমি শুনেছি। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। একজন শিক্ষককে এভাবে অপমান করা মানে শিক্ষক সমাজকে অপমান করা।’

এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার নেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উনার (স্বপন কুমার) বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানাতে পারত। সেটি না করে উনার গলায় জুতার মালা যারা পরিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।’

অবশ্য ঘটনার ৯ দিন হতে চললেও শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়নি কোনো প্রতিবাদ। এ প্রসঙ্গে ঢাবি শিক্ষক নেতা অধ্যাপক নিজামুল হক বলেন, ‘এটা আজকেই আমি শুনেছি। এটা নিয়ে আমি এখন কথা বলছি। কথা বলা শেষে প্রতিবাদলিপি দিয়ে দেব।’

ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।

এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পুলিশের সামনে শিক্ষকের এমন অপদস্ত হওয়ার ঘটনায় তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। ঘটনার পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্বপন কুমার বিশ্বাস।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাদেরকে জুতার মালা দেয়া দরকার তাদের আমরা দিই না। যারা সমাজের এবং জাতির মুখ, জাতি গঠনের রূপকার তাদেরকে জুতার মালা দেয়া হয়। এখন সামাজিক অবস্থানটাই এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, ‘কার কাছে বিচার চাইব? কে বিচার করবে? প্রতিনিয়ত এসব ঘটনা ঘটছে। কোনো প্রতিকার কি হয়েছে? একটুও হচ্ছে না, বরং দিন দিন এসব ঘটনা বেড়েই চলছে।’

শিক্ষকের প্রতি অপমান সমাজের জন্য ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে দেখছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ কে এম লুৎফর রহমান।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সমাজের আলোকবর্তিকা যাকে আমরা বলি সেই শিক্ষককে যখন অপমানিত, অসম্মানিত বা লাঞ্ছিত করা হয়, সে যেই হোক না কেনো তা সমাজের জন্য অশনি সংকেত।’

পুলিশের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই শিক্ষক। এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, ‘এই ঘটনায় পুলিশ কিংবা প্রশাসন দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারেনি। কিছু অতি উৎসাহী মানুষ না জেনে না বুঝে ইমোশনালি এই কাজগুলো করে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের আরও সতর্ক হতে হবে।’

ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সঠিক তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি। যিনি ভিকটিম তিনি যেন যথাযথ আত্মসম্মান ফিরে পান।’

স্বপন কুমারকে হেনস্তার ঘটনায় ক্ষুব্ধ জানতে বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন। সংগঠনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা শিক্ষক সমাজের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। এটি কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

‘কেউ অন্যায় করলে তার বিচার প্রচলিত আইনে হবে। আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হব।’

একই ধরনের মন্তব্য করেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু।

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের সামনে একজন শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনা কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। প্রশাসনের সামনে এ ধরনের বেআইনি কাজ কীভাবে হয়? আমরা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানাই।’

এ বিভাগের আরো খবর