বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কী থাকছে শিক্ষা আইনে

  •    
  • ২২ জুন, ২০২২ ০৮:১৭

শিক্ষা আইন-২০২২ এ চার স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশি পাঠক্রমে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনার জন্য নিবন্ধন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমের মানোন্নয়নে পদক্ষেপ, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন নেয়াসহ বেশ কয়েকটি বিধান যুক্ত থাকছে।

অবশেষে এক দশক পর আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে শিক্ষা আইন। আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৈঠকে আইনটির নানা দিক যাচাই-বাছাই শেষে চলতি মাসেই পাঠানো হবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। সেখানে অনুমোদন শেষে তা উঠবে সংসদে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) খালেদা আক্তার বলেন, শিক্ষা আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত করতে ২২ জুন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখযোগ্য কী কী বিষয় থাকছে শিক্ষা আইনে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জানা যায়, শিক্ষা আইন-২০২২ এ চার স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশি পাঠক্রমে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনার জন্য নিবন্ধন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমের মানোন্নয়নে পদক্ষেপ, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন নেয়াসহ বেশ কয়েকটি বিধান যুক্ত থাকছে।

কী আছে শিক্ষা আইনে

প্রস্তাবিত আইনে চার স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার স্তরগুলো হচ্ছে: পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক, দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চ মাধ্যমিক স্তর, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা স্তর।

এ ছাড়া আলাদাভাবে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের কথাও আছে আইনে। বলা হয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকতে হবে প্রাক-প্রাথমিক স্তর।

দেশের সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক এবং এটিকে শিশুর মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আইনে। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য সরকার পর্যায়ক্রমে নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করবে বলেও আইনে বলা হয়েছে।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাদানের উপযুক্ত ব্যবস্থা, শিশুদের প্রতি কোনোরূপ বৈষম্য না করা, অনগ্রসর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার এবং নিরাপদ ও শিশুবান্ধব শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও বলা হয়েছে শিক্ষা আইনে।

মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আইনে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক শিক্ষার ধারা হবে তিনটি- সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা। এতে বিদ্যমান প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণিতে চলমান পরীক্ষা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

আইনে ইংরেজি মাধ্যমের বা বিদেশি পাঠ্যক্রমের শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয়েছে, সাধারণ ধারার সমপর্যায়ের বাংলা, বাংলাদেশের অভ্যুদয়, বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে। না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

বিদেশি পাঠ্যক্রমে পরিচালিত স্কুল, কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসা অথবা বিদেশি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে শাখা স্থাপন বা পরিচালনার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। বিদেশি পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন, টিউশন ও অন্যান্য ফি আইন, বিধি বা আদেশ দ্বারা নির্ধারিত হবে।

প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে আরও বলা হয়েছে, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর নিজ সংস্কৃতির পরিপন্থি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কার্যক্রম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা করা যাবে না।

টিউশন ফিয়ের ক্ষেত্রে আইনে বলা হয়েছে, বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভারসনের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন, টিউশন ও অন্য ফি আদায়ের ক্ষেত্রে অযৌক্তিকভাবে উচ্চহারে আদায় করা হয়েছে- এমন প্রতীয়মান হলে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকার কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

শিক্ষকদের টিউশনিতে মানা

প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না। এ বিধান কেউ লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৫ লাখ টাকা অর্থ বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নোট বই, গাইড বই ক্রয় বা পাঠে বাধ্য করলে বা উৎসাহ দিলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সহায়ক বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ ও বাজারজাত করা যাবে।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট টিউশনের মাধ্যমে পাঠদান করতে পারবেন না। তবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুল সময়ের পূর্বে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীকে অর্থের বিনিময়ে প্রাইভেট টিউশন বা কোচিংয়ের মাধ্যমে পাঠদান করতে পারবেন না। এটি অসদাচরণ বলে ও শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

তবে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট টিউশনের মাধ্যমে পাঠদানের উদ্দেশ্যে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা বা কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করা এ আইনে নিষিদ্ধ হবে না। কোচিং সেন্টারে কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীকে পাঠদান করতে পারবেন না। এটি অসদাচরণ বলে গণ্য হবে।

এ ছাড়া চাকরিপ্রার্থীদের জন্য কোচিং, বিভিন্ন ভর্তি কোচিং, বিদেশি শিক্ষাক্রমে ভর্তির উদ্দেশ্যে কোচিং সেন্টার পরিচালনায় বৈধতা দেয়া হয়েছে খসড়া আইনে।

বলা হয়েছে নিবন্ধন ছাড়া কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা যাবে না। তা করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন

সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ছাড়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা যাবে না। এমনকি বাংলাদেশি কারিকুলামে বিদেশে প্রতিষ্ঠান স্থাপনেও অনুমতি লাগবে। ট্রাস্ট বা সংস্থা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে অনুমতি সাপেক্ষে।

যেভাবে শুরু হয় শিক্ষা আইন প্রণয়ন

২০১০ সালে প্রণয়ন করা জাতীয় শিক্ষানীতিতে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছিল।

শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছিল, শিক্ষাসংক্রান্ত সব আইন, বিধিবিধান, আদেশগুলো একত্রিত করে শিক্ষানীতির আলোকে এবং এর যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের পরপর ২০১১ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে ২৪টি উপকমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, যার একটি ছিল শিক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়ন। এরপর তিন-চার দফা শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। পরে ‘অসংগতিপূর্ণ’ ও অপেক্ষাকৃত ‘দুর্বল’ খসড়ার কারণে তা ফেরত পাঠায় মন্ত্রিসভা।

আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদ শুরু হলে শিক্ষা আইনের খসড়াটি আবারও পর্যালোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং সাবেক একজন সচিবকে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে চূড়ান্ত হচ্ছে ‘শিক্ষা আইন-২০২২’ এর খসড়া।

এ বিভাগের আরো খবর