ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও সিনেট সদস্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেয়া নিয়ে হট্টগোল হয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেছেন। তবে নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার রাতে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট নিয়ে অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বক্তব্য দিতে এসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। পরে তিনি ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিন্দাবাদ’ বলে তার বক্তব্য শেষ করেন।
তার এই ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান নিয়ে উপস্থিত কয়েকজন সদস্য আপত্তি জানালে উপাচার্য এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের এক সহকর্মী বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। শহীদদের রক্তে যে বাংলাদেশ, সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে বসে এ ধরনের স্লোগান ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। স্বাধীন বাংলাদেশে এ ধরনের স্লোগান দেয়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।’
এরপর পয়েন্ট অফ অর্ডার জানিয়ে সাদা দলের অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগানটা কবে থেকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেটি আমি মাকসুদ কামাল স্যারের কাছে জানতে চাই। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বক্তব্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির সঙ্গে এটি যায় না।’
উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এটি পাকিস্তান আমলে পাকিন্তান জিন্দাবাদ ধারার স্লোগান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি আর কেউ বলে না।’
এই পর্যায়ে ড. মামুন বলেন, ‘এই স্লোগান এখনো প্রচলিত আছে। আমরা প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছি।’
মূলত এরপরই হট্টগোল শুরু হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের অধ্যাপক জিনাত হুদাসহ অন্য সদস্যরা বলেন, ‘এটি পাকিস্তানের স্লোগান। স্বাধীন বাংলাদেশে এই স্লোগান থাকতে পারে না।’ আরেক সদস্য বলেন, ‘রাজাকারের মুখেই এই স্লোগান মানায়।’
জিনাত হুদা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এ রকম কোনো বক্তব্য আমরা আর সিনেটে শুনতে চাই না।’
উপাচার্য এরপর অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও অধ্যাপক মামুন আহমদকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা ভুল করেছেন। আপনাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।’
জবাবে অধ্যাপক মামুন আহমদ উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করবেন না স্যার।’
বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্যের এই পর্যায়ে নীল দলের অধ্যাপক শফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগান দেয়ার মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অমর্যাদা করা। এখানে জয় বাংলা বলতে হবে। কারণ জয় বাংলা জাতীয় স্লোগান।
সিনেটের সভায় উপস্থিত থাকা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তিলোত্তমা শিকদারও এই হট্টগোলে যোগ দেন।
পরে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু করা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট গ্রহণ করে না। এটি পাকিস্তানি ভাবধারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা অথবা এই মহান সিনেটকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস। এটি সিনেটে গ্রহণ করা হলো না।’