ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে ঘোষণা করা বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে গবেষণায় বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৫ লাখ টাকা। আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন বাজেট উপস্থাপন করেন। পরে সর্বসম্মতিক্রমে তা পাস করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
অধিবেশনের শুরুতেই সিনেট চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গের প্রতি শোক জ্ঞাপনে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
চলতি বছরের তুলনায় আসন্ন বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুদান ৫০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বেড়েছে।
নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) জন্য প্রস্তাবিত ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বাজেটে ইউজিসি থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে ৭৮১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাতগুলো থেকে আয় ধরা হয়েছে ৮৩ কোটি টাকা।
অর্থাৎ বাজেটে ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার মতো ঘাটতি থাকবে, যা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী আসন্ন অর্থবছরে ৬৭১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশন খাতে। এটা প্রস্তাবিত মোট বাজেটের ৭২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
অধিবেশনে চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটও পাস করা হয়। কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ চলতি বছরের ৮৬০ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেট পেশ করেন। চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) জন্য গত বছর ৮৩১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন হয়েছিল। অর্থাৎ এ বছর ২৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বেশি খরচ হয়েছে।
বাজেট উপস্থাপনের সময় ঘাটতি বাজেট নিয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয় বলে নিজস্ব তহবিল থেকে ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না। প্রতি বছর এভাবে তহবিল ঘাটতি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হবে।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের নতুন নতুন খাত খুঁজে বের করতে হবে। অন্যথায় সরকারের কাছে বিশেষ অনুদান চাওয়া যেতে পারে।’
মমতাজ উদ্দীন বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও একাডেমিক ভবন মেরামত ও সংস্কারের জন্য ইউজিসিকে বিশেষ তহবিল দিয়েছেন যেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
এদিকে উপস্থাপিত বাজেটে গবেষণা খাতে ১৫ কোটি ৫ লাখ টাকা তথা মোট বাজেটের ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বরাদ্দ হওয়াকে শিক্ষক ও প্রাক্তন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে ‘লজ্জাকর’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের সাবেক চেয়ারপারসন এবং সিনেট সদস্য অধ্যাপক এজেএম শফিউল আলম ভুঁইয়া।
পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন
বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য সিনেট সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনে প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সামাদ। পরে তার এই প্রস্তাবে অনেকে সমর্থন জানান। এরপর সিনেটের চেয়ারম্যান এবং উপাচার্য আখতারুজ্জামান এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন।