নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াতে একাট্টা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। সামনের দিনে আন্দোলন আরও জোরদার করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই দলটির ছাত্র সংগঠন- জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
নেতা-কর্মীদের ক্যাম্পাসমুখী করতে গুরুত্বপূর্ণ সব ইউনিটেও দেয়া হচ্ছে ছাত্রদলের নতুন কমিটি। তারই অংশ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণের ছয় বছর পর কমিটি পেতে যাচ্ছে ছাত্রদলের ‘সুপার ইউনিট’ খ্যাত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এরই মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকেও বসেছে। তবে কমিটি ঘোষণার খবরে নেতা-কর্মীরা আনন্দিত হলেও ‘অঞ্চলপ্রীতি’ ও বয়স্কদের দিয়ে কমিটি গঠনের গুঞ্জনে হতাশ হয়েছেন তারা।
এদিকে ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটে বিবাহিত, অছাত্র ও বরিশাল ব্লকের আধিপত্য নিয়ে নানা বিতর্কের শেষ হচ্ছে না। সদ্যঘোষিত আটটি ইউনিটের ১৬টি শীর্ষপদের মধ্যে ১০টিতেই বরিশাল অঞ্চল থেকে এবং তিনটিতে যশোর অঞ্চল থেকে নেতাদের পদায়ন করা হয়েছে, যা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতেও করা হতে পারে বলে শঙ্কায় রয়েছেন পদপ্রত্যাশীরা। এমনকি বরিশাল অঞ্চল থেকে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র পদপ্রত্যাশী না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পরও কলেজের শিক্ষার্থী দিয়ে কমিটি দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। চলতি মাসেই এই কমিটির ঘোষণা হতে পারে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদ্যঘোষিত আটটি ইউনিটের ১৬টি শীর্ষ পদের মধ্যে ১০টিতেই বরিশাল অঞ্চল থেকে এবং তিনটিতে যশোর অঞ্চলের নেতাদের পদায়ন করা হয়েছে। ফাইল ছবি
এর আগে গত ১৮ মে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মাধ্যমিক পাস করা নেতা-কর্মীদের থেকে সিভি চেয়েছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর ২ জুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে এক বৈঠকে বসে ছাত্রদলের সুপার ফাইভ ও কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সেখানে মোটামুটিভাবে কারা পরবর্তী এই ইউনিটের নেতৃত্বে আসছেন তা প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে অভিযোগ আছে, গত খোকন-শ্যামল কমিটিতে ছাত্রদলের পদ পেতে ২০০৫-এর পরবর্তী সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষাবর্ষ ক্রাইটেরিয়া হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। তবে অঞ্চলপ্রীতির কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ২০০১ সালের মাধ্যমিক শিক্ষাবর্ষ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনয়নের জন্য ২০০০ সালের পরবর্তী সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষাবর্ষ ক্রাইটেরিয়া হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতৃত্বের জন্য ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও এই বর্ষের শিক্ষার্থীরা মূলত জগন্নাথ কলেজে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। সে হিসাবে ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে নেতৃত্ব আসা মানে হলো কলেজের শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা। এ ছাড়া ২০০১ সালে যারা মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের বয়স এখন প্রায় ৩৮-এর কাছাকাছি।
সর্বশেষ ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন এফ এম শরিফুল ইসলাম। সেই কমিটিসহ পরে ছাত্রলীগের তিনটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের বয়স্কদের দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি দেওয়ার গুঞ্জনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জুনিয়র পদপ্রত্যাশী ও নেতা-কর্মীরা।
তারা বলেছেন, গত কয়েক বছর ধরে আমরাই ক্যাম্পাসমুখী ছিলাম। নানা বাধা সত্ত্বেও ক্যাম্পাসে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছি। কলেজের বড় ভাইয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন না। ছাত্রলীগের রোষানলে তারা পড়েন না। আমরা ক্যাম্পাসে নিয়মিত আসি এবং জুনিয়রদের সংগঠিত করেছি। অছাত্র আর নির্দিষ্ট অঞ্চলের লোক দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল চলতে পারে না।
তবে অঞ্চল সিন্ডিকেট বাদ দিয়ে ত্যাগী ও অভিজ্ঞ তরুণদের দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। তিনি বলেন, যারা প্রার্থী তারা দৌড়ঝাঁপ করছে, তবে এখনো কমিটি চূড়ান্ত করা হয়নি। অঞ্চল দেখে নয়, বরং যারা যোগ্য ও ত্যাগী তাদের দিয়েই কমিটি হবে বলে তিনি জানান।
কলেজ থেকে কমিটি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অভিজ্ঞ তরুণদের দিয়েই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি। এমন কমিটি দেওয়া হবে, যাতে ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারে।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আলী হাওলাদার আলী, আসাদুজ্জামান আসলাম, মিল্লাত ভূইয়া ও সুজন মোল্লা। তারা চারজনই জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ২০০৫ সালের আগের মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ফিন্যান্স বিভাগের কাজী জিয়াউদ্দিন বাসেত, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান হিমেল আলোচনায় রয়েছেন। তারা উভয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ ব্যাচ ও ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে আলোচনায় থাকা শামসুল আরেফিন ও শাহাদাত হোসেন ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এদের সবাই ২০০৫ সালের পরবর্তী সময়ে মাধ্যমিক শেষ করেছেন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি করা হয়। এতে রফিকুল ইসলাম রফিককে সভাপতি ও আসিফ রহমান বিপ্লবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। গত বছরের ১৫ অক্টোবর শাখা ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।