নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকের ভূমিকায় পরিবর্তন আসবে। শিক্ষক হবেন ফ্যাসিলিটেটর বা গাইড। একই সঙ্গে তারা শিক্ষার্থীদের আনন্দের অংশীদার হবেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সেন্ট জোসেফ স্কুলে বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধনের সময় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমে শিক্ষক হবেন গাইড। শিক্ষার্থীদের আনন্দময় শিক্ষায় প্রবেশ করতে পরিচালকের ভূমিকা পালন করবেন শিক্ষকরা।’
নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকের জায়গায়ও (ভূমিকা) পরিবর্তন আসছে। শিক্ষকের ভূমিকায় পরিবর্তন অনেকটা এই রকম—শিক্ষক এখন ফ্যাসিলিটেটর হবেন, গাইড হবেন; শিক্ষার্থীর আনন্দের অংশীদার হবেন।
‘শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষার জগৎটাকে শিক্ষক তৈরি করে দেবেন। আমরা অনেক যত্ন করে এটা (নতুন শিক্ষাক্রম) তৈরি করেছি, যেন শিক্ষার্থীরা আনন্দের মধ্যে শিক্ষার জগৎটাকে খুঁজে নিতে এবং শিক্ষার জায়গাটাকে পূরণ করতে পারে।’
শিক্ষাকে আনন্দময় করতেই শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘কীভাবে আনন্দ করে পড়া যায়, শেখা যায়, বোঝা যায়, শিক্ষাকে সবার জন্য সহজ করে দেয়া, আনন্দময় করে দেয়ার জন্যই শিক্ষায় সেই পরিবর্তন আনতে চাই। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষাকে আনন্দময় করতে চাই; শিক্ষায় পরিবর্তন আনতে চাই।’
শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিখতেই হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে তিনটি শিল্পবিপ্লব পার হয়ে গেছে। সেই বিপ্লবকে আমরা ধরতে পারিনি। তথ্যপ্রযুক্তির জায়গায় আমরা এসেছি, কিন্তু তার আগেরগুলো আমরা ধরতে পারিনি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবটি শুধু আমাদের ধরতে পারা নয়, এর সফল অংশীদার হতে হবে। তার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সে জন্য বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর অনেক বেশি জোর দিতে হবে।
‘একই সঙ্গে আমি এই কথাটিও বলতে চাই—বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, গণিত, পরিসংখ্যান, প্রকৌশল পড়তে হবে। নিশ্চয়ই পড়তে হবে, কিন্তু সাহিত্য ও নন্দনতত্ত্বের বোধ যদি তৈরি না হয়, তাহলে শুধু বিজ্ঞান, গণিত, তথ্যপ্রযুক্তি পড়ে পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরি হবে না। সে কারণে সাহিত্যও পড়তে হবে। তাই আমরা যেন এর সবকিছু মেলাতে পারি, সে চেষ্টা করছি।’
শিক্ষায় বিনিয়োগ মোট দেশজ উৎপাদনের (ডিজিপি) ছয় ভাগে নিতে হবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো শেষ হলে শিক্ষাই হবে সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প।’
শিক্ষার বাজেট প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষায় বিনিয়োগ ডিজিপির ছয় ভাগে যেতে হবে, আমরা তিন ভাগে আছি। ২০০৬ সালে আমাদের সারা দেশের যা বাজেট ছিল, এখন শিক্ষা বাজেটই তার চেয়ে অনেক বেশি। শিক্ষায় আমরা অনেক বিনিয়োগ করছি। আরও অনেক বিনিয়োগ করতে হবে।
‘আমি বিশ্বাস করি, বড় বড় সব মেগা প্রকল্প হচ্ছে, এগুলো যেমন আমাদের যোগাযোগের জন্য, দেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার, তেমনি পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষার। সেটিই হবে বড় মেগা প্রকল্প।’
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনার কথা জানিয়েছে সরকার। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির দুটি পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না।
নবম ও দশম শ্রেণিতে মানবিক, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা নামে বিভাগও তুলে দেয়া হবে। সেটি ঠিক হবে উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে।
এর আগে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন নিয়ে মন্ত্রী দীপু মনি বলেছিলেন, ‘২০২৩ সাল থেকে আশা করছি নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে পারব। সে ক্ষেত্রে ২০২৩ সালে প্রাথমিকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে এটি চালু হবে। আর মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হবে। আর পাইলটিং যেটি আগামী বছর করব, সেটি হবে প্রাথমিকে প্রথম শ্রেণি ও মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০২৪ সালে চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণি আর অষ্টম-নবম শ্রেণি হবে। ২০২৫ সালে এদিকে পঞ্চম ও ওদিকে দশম শ্রেণি। অর্থাৎ ইমপ্লিমেন্টেশনটা হয়ে যাবে। এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সব করা হচ্ছে।’