ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় কেন্দ্র পরিদর্শকের ভুলে দেড় ঘণ্টার পরীক্ষায় প্রায় ২০ মিনিট সময় নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এক পরীক্ষার্থী।
পরীক্ষার পরপরই ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক এবং কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল বাছিরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই পরীক্ষার্থী।
গত শনিবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা হয়।
ওই শিক্ষার্থীর নাম সাদিয়া আফরিন নিঝুম। ভর্তি পরীক্ষায় তার রোল ৩১১৩৪৯৭। ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩০৬ নম্বর কক্ষে তিনি পরীক্ষা দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী জানান, পরীক্ষা কেন্দ্রে থাকা পরিদর্শক খাতায় সিগনেচার করতে এসে ভুলে তার বহুনির্বাচনি অংশের ওএমআরের পরিবর্তে লিখিত অংশের ওএমআর ছিঁড়ে ফেলেন। পরে নতুন খাতা দিতে তিনি ২০ মিনিট দেরি করেন। ততক্ষণে বহুনির্বাচনি অংশের জন্য থাকা ৪৫ মিনিটের মধ্যে ২৫ মিনিট শেষ হয়ে যায়।
ছাত্রীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, পরিদর্শক তাকে লিখিত অংশের জন্য বরাদ্দকৃত ৪৫ মিনিটের মধ্যে ৫ মিনিট সময় বহুনির্বাচনি অংশের জন্য দেন, তবে পরীক্ষার মোট সময় বাড়ানো হয়নি। ফলে তাকে ফের নতুন করে ওএমআরের সব তথ্য পূরণ করে ২৫ মিনিটের মধ্যে বহুনির্বাচনি অংশ এবং ৪০ মিনিটের মধ্যে লিখিত অংশ শেষ করতে হয়।
দীর্ঘদিন যে পরিশ্রম করেছেন, তা বৃথা হয়ে যাচ্ছে বলে লিখিত অভিযোগে আক্ষেপ করেন পরীক্ষার্থী।
বিষয়টি বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা নিয়ে অথবা এই ক্ষতির জন্য প্রয়োজনীয় যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তা বিবেচনা করার আহ্বান জানান তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে সেদিন ৩০৬ নম্বর কক্ষের পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক তাহেরা ইয়াসমিন বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট অভিযোগ। তাদের ওএমআর ছেঁড়ার দায়িত্ব আমার না। ওএমআর শিক্ষার্থীরাই ছিঁড়বে।’
এই শিক্ষক বলেন, ‘সেদিন আমার রুমে ৩০ জন শিক্ষার্থীর আসন পড়েছে আর খাতা ছিল ৩১টা। পরীক্ষার শুরুতে আমি সবাইকে নির্দেশনা শুনিয়ে খাতা দিই। প্রশ্ন দেয়ার আগে এক শিক্ষার্থী জানান, তিনি ভুলক্রমে লিখিত অংশের ওএমআর ছিঁড়ে ফেলেছেন।
‘পরে আমি কথা না বাড়িয়ে আমার হাতে থাকা অতিরিক্ত খাতাটা তাকে দিই। এরপর যখন আমি প্রশ্ন দেয়া শুরু করি, তখন এই মেয়েটা (সাদিয়া আফরিন) জানান, সেও একই ভুল করেছে। লিখিত অংশের ওএমআর ছিঁড়ে ফেলেছে।
‘পরে আমি আমাদের প্রিন্সিপ্যাল ম্যাম এবং ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ম্যামকে ফোন দিই, কিন্তু তাদের সাড়া না পাওয়ায় রুমের বাইরে থাকা পিয়নকে জানালে, সে অন্য রুম থেকে একটা খাতা নিয়ে এসে মেয়েটাকে দেয়। এরপর তাকে লিখিত অংশের ১০ মিনিট সময়ও দেয়া হয়েছে।’
নতুন খাতা না দিয়ে ছেঁড়া অংশ স্ট্যাপলার করে দেয়ার সুযোগ ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ রকম যুক্ত করে দেয়া যায় কি না, সেটি আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিনা আক্তার বলেন, ‘পরীক্ষা শেষে যখন আমরা খাতা প্যাকিং করছি, তখন সেই শিক্ষার্থীর অভিভাবক এসে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তখন আর আমাদের কিছু করার সুযোগ ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থী নিজেই এই ওএমআর ছিঁড়েছেন। তাকে আমরা যতটুকু সম্ভব হেল্প করেছি। তার পরীক্ষা কোনোভাবে খারাপ হয়েছে। এই জন্যই হয়তো সেই শিক্ষার্থী এই মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’
সার্বিক বিষয়ে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছির বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। আমরা সেই শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থী অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেছি। শিক্ষিকা বলছেন, এই ওএমআর শিক্ষার্থী ছিঁড়েছে আর অভিভাবক বলছেন, শিক্ষিকাই ছিঁড়েছেন। যাই হোক, এটা তো আর আমরা ছবি তুলে রাখিনি।
‘সেই শিক্ষিকা এই শিক্ষার্থীকে দশ মিনিট সময় অতিরিক্ত দিয়েছেন। সে সেটা পুষিয়ে ফেলেছে। তার খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। পরে অভিভাবকও বুঝে গেছেন।’
ছাত্রীর বোন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবরিন মিম বলেন, ‘আমি অভিযোগ দেয়ার পরদিন বাছির স্যারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছিলাম। তিনি সেই শিক্ষিকার বক্তব্য আমাকে জানিয়েছেন। আমি স্যারকে বলেছি, আমার বোনকে অবিশ্বাস করলে সেই শিক্ষিকাকেও কেন আপনি অবিশ্বাস করছেন না, তবে স্যার আমাকে এই বিষয়ে তার কিছু করার নেই বলে জানান।’
ছাত্রীর বোন আরও বলেন, “যদি আসলেই আমার বোনের দোষ হতো তাহলে আমি এত কিছু করতাম না। তার জন্য সেই প্রশ্ন কঠিন হওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। আমার বোন এতটাই কনফিডেন্ট ছিল যে, সে ‘খ’ ইউনিট ছাড়া অন্য কোনো ইউনিটের ফর্মই পূরণ করেনি।
“এখন আমরা এটা নিয়ে উপাচার্য (অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান) স্যারের কাছে অভিযোগ দেব।”