নিজের বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন রাজধানীর ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের বরখাস্ত অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন আহম্মেদ। তাকেসহ তিন শিক্ষককে নিয়ম বর্হিভূতভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
সাবেক অধ্যক্ষ শামছুল আলমকে পুনরায় এ পদে বসাতে তার অনুসারীরা ষড়যন্ত্র হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ম্যানেজিং কমিটি বাধ্য হয়ে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে জসিম উদ্দিন আহম্মেদ এসব দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদ দাবি করেন, ‘কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. শামছুল আলম দায়িত্বে থাকার সময়ে তার আত্মীয়-স্বজন ও নিজ এলাকার প্রায় ৫৫ জনকে শিক্ষক-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেন। তারা জোটবদ্ধ হয়ে মূলত কলেজটিতে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে। এর আগেও তারা জোটবদ্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে আন্দোলন চালালেও তাতে সফল হয়নি। তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কলেজ প্রশাসনকে হেয় করে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করছে। তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে অধ্যক্ষ পদে বসাতে এমন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘শামছুল আলম দায়িত্বরত সময়ে এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগে অনিয়ম ও ভুয়া অভিজ্ঞতার সদনপত্র যাচাইয়ে গভর্নিং বডির অনুমোদনে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে। এসব অনিয়ম ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে তদন্ত চলমান অবস্থায় তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়ে আন্দোলন শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে।
‘শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ফেসবুকে প্রচার করে কলেজবিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু করতে আহ্বান করা হয়। সেটি না করলে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে দেয়া হবে না বলে ভয়ভীতি দেখানো হয়। সে কারণে শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনে যুক্ত হয়।’তার বিরুদ্ধে ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গভর্নিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া এককভাবে অধ্যক্ষের কলেজের ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করা সম্ভব নয়। এটি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা ও কলেজের উন্নয়নকাজে ব্যয় হিসেবে উত্তোলন করা হয়েছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানে কোনো অধ্যক্ষকে এক বছরের বেশি থাকতে দেয়া হয় না। শামছুল আলমের অনুসারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে নানা ধরনের অভিযোগে আন্দোলন করে তাকে সরিয়ে দেয় তারা। সেখানে আমি গত পাঁচ বছর সফলভাবে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের বহিষ্কার হওয়া শিক্ষক তরুণ কুমার গাঙ্গুলী, তৌফিক আজিজ চৌধুরিসহ সাবেক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
তবে সংবাদ সম্মেলনে করা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া আইডিয়াল কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কারণ সাবেক অধ্যক্ষ ড. শামছুল আলম কলেজ ছেড়েছেন প্রায় ১০/১১ বছর আগে। এর পর কয়েকজন অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন পরিস্হিতি ঘোলাটে করতে এ ধরনের অভিযোগ করছেন। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ম্যানেজিং কমিটি অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে বলেই ব্যবস্থা নিয়েছে।’
দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছিলেন।
শনিবার রাত ৮টার পর অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিনসহ তিন শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানায় কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি।