বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখভালের দায়িত্বে থাকা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) বিরুদ্ধেই উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। তাই ডিআইএ কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষা সচিব। বলেছেন, দুর্নীতিতে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এই দপ্তরে দীর্ঘদিন থাকা কর্মকর্তাদের সহসাই বদলি করা হবে।
গত ১০ বছরে দুর্নীতি অনুসন্ধানে এ প্রতিষ্ঠান কার্যকর কী পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থার দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের পাঠানো প্রতিবেদন এবং তা প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক।
বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, গত ২৪ মে নিউজবাংলায় প্রকাশিত ‘যে দপ্তরে কর্মকর্তারা পদোন্নতি চান না’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি সচিবের দৃষ্টিগোচর হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সচিব ডিআইএ পরিচালককে দীর্ঘদিন থাকা কর্মকর্তাদের বদলি করার কথা জানান।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সচিব বলেছেন, ডিআইএর দুর্নাম ঘোচাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা কোনো কর্মকর্তাকে ছাড় দেয়া হবে না। সহসাই এ প্রতিষ্ঠানে আমূল পরিবর্তন আসবে।
বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক এবং প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটনের দায়িত্ব পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের। তবে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হওয়ার অভিযোগ করেছে দুদক।
গত ১০ বছরে দুর্নীতি অনুসন্ধানে এই প্রতিষ্ঠান (ডিআইএ) কার্যকর কী পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দেন সচিব। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা বেনামে ঠিকাদারিতে জড়িত কি না তার তথ্য এবং পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের টেন্ডার প্রক্রিয়া, পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি কিছু প্রকাশকের কাছে অনুমোদন ছাড়া সরবরাহসহ অবৈধ কোচিং বাণিজ্য বন্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন সচিব।
সভার পাশাপাশি সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি বন্ধ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং তার অধীন সব দপ্তর ও সংস্থায় অভিযোগ বাক্সগুলো সচল করার নির্দেশ দেয়া হয়।
সভায় নির্দেশ দেয়া হয়, অভিযোগ বক্সের চাবি থাকবে অফিসপ্রধানের কাছে। তিনিই সেটি খুলবেন। মাসে একবার বক্সগুলো খোলার পর কোনো কিছু না পড়েই সব অভিযোগ আগে রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি প্রত্যেক মাসে অভিযোগের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হবে।
সচিব বলেন, ‘আমরা শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যদি আলোকিত না হই তাহলে অন্যরা কীভাবে আলোকিত হবে? আমাদের উদাহরণ স্থাপন করতে হবে। আমাদের সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং অধীনস্ত বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।