বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করে থাকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক মামলার জালে পড়েছে। এতে আটকে যাচ্ছে একের পর এক নিয়োগ প্রক্রিয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক মামলা করা হয়েছে এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দুই শতাধিক মামলা ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। এখনও চলমান রয়েছে তিন শতাধিক মামলা।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি ঠিক আমরা যে পরিকল্পনা নিয়ে কাজগুলো শুরু করি, শেষ পর্যন্ত নানা জটিলতায় তা আর শেষ করতে পারছি না। এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা মামলা।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক চাকরিপ্রার্থী না বুঝেই মামলা করে পুরো প্রক্রিয়াটি আটকে দিচ্ছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সেটিও মামলা জটিলতায় দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়েছে। কিছুদিন আগে আমরা বিষয়টির সমাধান করেছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, সর্বশেষ তৃতীয় গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। এই তৃতীয় গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধেও প্রায় ২৭টি মামলা করা হয়েছিল। পরে সব মামলা নিষ্পত্তি করে তৃতীয় গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ ঠেকাতেও মামলা করা হয়েছে। পরে কোর্টের মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করা হয়।
এখনও এনটিআরসিএ-র বিরুদ্ধে তিন শতাধিক মামলা চলমান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঁচ শতাধিক মামলা করা হয়েছে এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দুই শতাধিক মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। এখনও চলমান রয়েছে তিন শতাধিক মামলা।
জানা যায়, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০০৫ সাল থেকে সনদ দিয়ে আসছিল এনটিআরসিএ, যদিও নিয়োগের ক্ষমতা ছিল গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির হাতে। ২০১৫ সালে এই পদ্ধতির পরিবর্তন আনে সরকার। এর পর থেকে এনটিআরসিএ সনদ দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশও করে।
সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদের বিপরীতে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক ও জাতীয় সম্মিলিত মেধাতালিকায় স্থান পেতে হয়। এরপর নিয়োগের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি বা সার্কুলারের মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন নেয়া হয়। চূড়ান্ত ধাপে মেধাতালিকা অনুসরণ করে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে একজন শিক্ষককে সেই পদে সুপারিশ করা হয়।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি তৃতীয় গণনিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৪ হাজার ৭৩টি পদে বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ।
যদিও গত বছরের ১৫ জুলাই ৩৮ হাজার ২৮৩ জন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছিল এনটিআরসিএ।
গত বছরের ৩০ মার্চ তৃতীয় ধাপে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ।
গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৫৪ হাজার ৩০৪টি শূন্য পদের মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৩১ হাজার ১০১টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত পদ ২৬ হাজার ৮৩৮টি। মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদ ২০ হাজার ৯৯৬টি।
এর মধ্যে ১৯ হাজার ১৫৪টি এমপিওভুক্ত। আর ২ হাজার ২০৭টি এমপিও পদ রিট মামলায় অংশ নেয়াদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়।
৫১ হাজার ৭৬১টি পদে সুপারিশ করার কথা থাকলেও গত বছরের ১৫ জুলাই সুপারিশ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ২৮৬ জন প্রার্থীকে। তাদের মধ্যে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৩৪ হাজার ৬১০ জন এবং নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ৬৭৬ জন।
আর ৮ হাজার ৪৪৮টি পদে কোনো আবেদন না পাওয়ায় এবং ৬ হাজার ৭৭৭টি নারী কোটায় প্রার্থী না পাওয়ায় ১৫ হাজার ৩২৫টি পদে ফল দেয়নি এনটিআরসি।