শিশুকাল থেকে গণতন্ত্রের চর্চা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাশীল করতে আবারও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিদ্যালয়গুলোতে আয়োজন করা হবে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চলতি বছর আবারও নির্বাচন আয়োজন করতে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২ জুন সারাদেশে স্টুডেন্টস কাউন্সিলের ভোট হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মো. নজরুল ইসলামের সই করা অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মনীষ চাকমা (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্রের চর্চা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাশীল করতে স্টুডেন্ট কাউন্সিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ বছর থেকেই আবারও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
২০১০ সালে প্রথম স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর সারাদেশের ১৯টি জেলার ২০টি উপজেলার ১০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠন করা হয়। এই স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কার্যক্রম স্থানীয় জনসাধারণ, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে বিপুল আগ্রহ ও উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। ২০১১ সালেও সারাদেশে ৭৪১টি বিদ্যালয়ে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠন করা হয়। এরপর ২০১২ সালে সারাদেশে ১৩ হাজার ৫৮৩টি বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচন হয়।
২০১৩ সালে স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কার্যক্রমকে বিস্তৃত করতে সারাদেশের সব জেলা-উপজেলায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় তা আর সম্ভব হয়নি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, শিশুকাল থেকে গণতন্ত্রের চর্চা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাশীল করার পাশাপাশি অন্যের মতামতের প্রতি সহিষ্ণুতা এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন, বিদ্যালয়ে শিখন শেখানো কার্যক্রমে শিক্ষকমণ্ডলীকে সহায়তা করা, শতভাগ শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও ঝরে পড়া রোধে সহযোগিতা করা, শিখন শেখানোর কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করা এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠনের উদ্দেশ্য।
অফিস আদেশে বলা হয়, আগামী ১৪-১৬ মে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তা কর্তৃক প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসি) সভাপতিদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানাবেন। ১৭-২১ মে বিদ্যালয় পর্যায়ে এসএমসি, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে সভা হবে। ২২ মে নিয়োগ করা হবে নির্বাচন কমিশনার। ২৩ মে ভোটার তালিকা প্রকাশ ও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
আরও বলা হয়, ২৪ মে মনোনয়ন আহ্বান, ২৮ মে মনোনয়ন জমা, ২৯ মে মনোনয়ন বাছাই ও বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৩০ মে মনোনয়ন প্রত্যাহার এবং চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ২ জুন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮০ জন। আর শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার ২৬৫ জন।