সমালোচনার মুখে প্রয়াত সাংবাদিক এ জেড এম এনায়েতুল্লাহ্ খানের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্ট ফান্ড বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এনায়েতুল্লাহ্ খানের নামে অভিযোগ, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে তার নামে বিকৃত তথ্য প্রচার করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর অযাচিত নানা সমালোচনা করা হতো।
গত ১০ মে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লাউঞ্জে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে 'এনায়েতুল্লাহ্ খান স্মৃতি ট্রাস্ট ফান্ড' প্রতিষ্ঠার জন্য এনায়েতুল্লাহ্ খানের মেয়ে নাসরীন জামান ২৫ লাখ টাকার একটি চেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদের কাছে হস্তান্তর করেন।
এ সময় উপাচার্য ছাড়াও এনায়েতুল্লাহ্ খানের ভাই মহাজোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন জিয়া রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান আবুল মনসুর আহাম্মদ এবং দাতা পরিবারের সদস্য আবু সালেহ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান উপস্থিত ছিলেন।
এই ট্রাস্ট ফান্ডের আয় থেকে প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জনকারী শিক্ষার্থীকে একটি স্বর্ণপদক এবং কয়েকজন মেধাবী ও আর্থিক অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে 'এনায়েতুল্লাহ্ খান স্মৃতি ট্রাস্ট ফান্ড' বৃত্তি প্রদান করার পরিকল্পনা ছিল।
এই ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য দাতা নাসরীন জামানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এই ফান্ডের মাধ্যমে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত ও উপকৃত হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন।তবে এই ফান্ড গঠনের পর একটি অনলাইন পোর্টালে এনায়েতুল্লাহ্ খানের ভূমিকা নিয়ে নিউজ প্রকাশ হলে এটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতেই উপাচার্য আখতারুজ্জামান এই ট্রাস্ট ফান্ডের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন।
আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এনায়েতুল্লাহ্ খানের নামে এখন যে তথ্যগুলো পাচ্ছি, সে তথ্যগুলো খুবই অনভিপ্রেত। এই মূল্যবোধ কোনোক্রমেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনুশীলন এবং চর্চা করে না। সে কারণেই এটির সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
যারা প্রকৃত তথ্যগুলো সামনে এনেছেন তাদের প্রতিও ধন্যবাদ জানান তিনি।
উপাচার্য বলেন, ‘তথ্যের ঘাটতি থাকলে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়। এ জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে যারা এই তথ্যগুলো দিয়ে সহায়তা করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাই।‘
এনায়েতুল্লাহ্ খান সাপ্তাহিক দৈনিক হলিডে ও দৈনিক নিউ এজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমানের সেনা শাসনের সময় ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।
এ ছাড়া কয়েকটি দেশে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় বিএনপি সরকার তাকে একুশে পদকেও ভূষিত করে।
২০০৫ সালের ১০ নভেম্বর ৬৬ বছর বয়সে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এনায়েতুল্লাহ্।