বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রকল্প শেষেও ইউনিক আইডি পাবে না শিক্ষার্থীরা

  •    
  • ১০ মে, ২০২২ ০৮:১২

ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দেয়ার প্রকল্পের ৩ বছর ১০ মাস শেষ। প্রকল্পের আর বাকি রয়েছে দুই মাসের কম। অথচ এখনও একটিও ইউনিক আইডি তৈরি হয়নি। এ নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে চলছে টানাপোড়েন। প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর, যা শেষ হতে বাকি আর দুই মাসেরও কম সময়। পেরিয়ে গেছে ৩ বছর ১০ মাস। অথচ এখনও তৈরি হয়নি একটিও ইউনিক আইডি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বহুল আলোচিত এস্টাবলিশমেন্ট অফ ইনটিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইইআইএমএস) প্রকল্পের করুণ দশা। এ প্রকল্পের আওতায়ই ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করেছে ব্যানবেইস।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এক জায়গায় রাখার জন্য তৈরি করা হচ্ছে ইউনিক আইডি। শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে এই আইডি জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) রূপান্তরিত হবে।

ঘোষণা ছিল, মুজিববর্ষেই (২০২২ সালের মার্চ) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ১ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে ইউনিক আইডি কার্ড তুলে দেয়া হবে। সে ঘোষণা এখন সুদূরপরাহত। কারণ এখন পর্যন্ত একটি ইউনিক আইডিও তৈরি হয়নি। আর এর জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে ব্যানবেইস ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ প্রকল্পের অধীনে সারা দেশ (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়) থেকে তথ্য সংগ্রহ ও তা সফটওয়্যারে এন্ট্রির কাজ করছে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যানবেইসের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, ইতোমধ্যে ৫৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর তথ্য সফটওয়্যারে এন্ট্রি দেয়া হয়েছে। এখন তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই ও ইউনিক আইডি তৈরির দায়িত্ব জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের। কিন্তু তাদের অদক্ষতা ও উদাসীনতার কারণে সময় মতো (মুজিববর্ষে) শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দেয়া সম্ভব হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সফটওয়্যারে এন্ট্রিকৃত তথ্য যাচাই-বাছাই ও ইউনিক আইডি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয় এখনও একজন শিক্ষার্থীর তথ্য যাচাই-বাছাই করে ইউনিক আইডি তৈরি করতে পারেনি।

ইউনিক আইডি তৈরির কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ইতোমধ্যে ৩ বছর ১০ মাস শেষ। প্রকল্পের আর বাকি রয়েছে দুই মাসের কম। অথচ এখনও এপিআই-ই তৈরি করেনি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না এই সময়ের মধ্যে তারা একটিও ইউনিক আইডি তৈরি করতে পারবে।

কেন কাজের অগ্রগতি এত কম

প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে দুই সংস্থা ব্যানবেইস ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান।

ব্যানবেইস বলছে, ইতোমধ্যে যেসব তথ্য সফটওয়্যারে এন্ট্রি দেয়া হয়েছে, তা যাচাই-বাছাই ও ইউনিক আইডি তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়। এ জন্য তাদের একাধিকবার তাগাদাপত্রও দেয়া হয়েছে। এর সব কপি নিউজবাংলার হাতেও এসেছে।

প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক মো. শামসুল আলমের সই করা সর্বশেষ তাগাদাপত্রে (যা দেয়া হয় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি) জরুরি ভিত্তিতে কার্যক্রম শুরুর জন্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অনুরোধ করা হয়।

তাগাদাপত্রে লেখা হয়, ‘সরকারের সিআরভিএস (সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস) ব্যবস্থার আলোকে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীর প্রোফাইল ডাটাবেস প্রণয়ন ও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য ইউনিক আইডি প্রদানের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ অফিস অফ রেজিস্ট্রার জেনারেল, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন এবং ব্যানবেইসের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

‘সমঝোতা স্মারক অনুসারে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয় থেকে এপিআই-এর মাধ্যমে ব্যানবেইসের রিকোয়েস্ট প্যারামিটার এবং জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের রেসপন্স প্যারামিটার উল্লেখ করে পত্র দেয়া হয়। কিন্তু জবাবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো লিখিত ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি।’

ইউনিক আইডির তথ্য যাচাই-বাছাই ও নম্বর তৈরির জন্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়কে তাগাদাপত্র দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন ইউনিক আইডির প্রকল্প পরিচালক (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) অধ্যাপক মো. শামছুল আলম।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ৫৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর তথ্য সফটওয়্যারে এন্ট্রি দিয়েছি। আশা করছি, বাকিগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য একাধিকবার তাদের (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়) তাগাদাপত্র দিয়েছি।’

প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাঝপথে কাজ তো ফেলে রাখা যাবে না। তাই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।’

কেন এত দিনে একটিও ইউনিক আইডি তৈরি করা সম্ভব হয়নি- এমন প্রশ্নে তিনি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ে খোঁজ নেয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে যা করার প্রয়োজন ছিল তা করছি। তারপরও কেন একটিও আইডি তৈরি হয়নি, এ বিষয়ে আপনি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ে খোঁজ নিন।’

আর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের ভাষ্য, যেসব তথ্য ব্যানবেইস সফটওয়্যারে এন্ট্রি দিয়েছে, তার অধিকাংশ অসম্পূর্ণ ও ভুল। এ জন্য তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই এবং ইউনিক আইডি তৈরিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের মিল না থাকায় অনেক আইডি তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া কারিগরি জটিলতাও ইউনিক আইডি তৈরি না হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করে তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইইআইএমএস প্রকল্পের এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়ের গাফিলতির কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে সরকারের আলোচিত এ প্রকল্প। প্রকল্পের মেয়াদ ৩ বছর ১০ মাস শেষ হলেও এখন পর্যন্ত তারা (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়) এপিআই (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস) তৈরি করতে পারেনি। এ জন্য মাঠ পর্যায় থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তা যাচাই-বাছাই ও ইউনিক আইডির নম্বর তৈরি সম্ভব হচ্ছে না।

অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস বা এপিআই হচ্ছে একগুচ্ছ ফাংশনের সমষ্টি। এটি একটি ইন্টারফেস, যা কোনো কম্পিউটার, লাইব্রেরি অথবা অ্যাপ্লিকেশন অন্য অ্যাপ্লিকেশনকে বিভিন্ন সার্ভিস দেয়ার লক্ষ্যে বা ডাটা বিনিময় করে থাকে।

তিনি আরও বলেন, ব্যানবেইস থেকে এ পর্যন্ত পাঁচবার তাগাদাপত্র দেয়া হলেও কোনো সাড়া দেয়নি জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়। আর এতেই ৩৫৩ কোটির বেশি টাকার আলোচিত প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জন্ম ও মৃতু নিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল পলাশ কান্তি বালা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যানবেইস থেকে যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে, এর অনেক তথ্যে গরমিল রয়েছে। এ জন্য তারা সেসব ডেটা পাঠিয়েছে (সফটওয়্যারে এন্ট্রি দিয়েছে) তা থেকে আইডি ক্রিয়েট করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা একাধিকবার বৈঠক করেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই এ সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারিগরি কিছু জটিলতাও আছে। এ ছাড়া অধিকাংশের জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের তথ্যের সঙ্গে এন্ট্রি দেয়া তথ্যের মিল নেই। আর তারা যে তথ্য আমাদের দিয়েছে, তা কারিগরি জটিলতায় সিস্টেমে শো করছে না, তাই ইউনিক আইডি তৈরি হয়ে থাকলে শো করছে না। আলাদাভাবে যেসব শিক্ষার্থী আমাদের সিস্টেমে জন্ম নিবন্ধন করেছে, তাদেরটা আমাদের সিস্টেমে শো করছে।’

আইনগত কিছু জটিলতার জন্যও সঠিক সময়ে প্রকল্পের কাজ (ইউনিক আইডি তৈরি) সমাপ্ত করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

বলেন, ‘ইউনিক আইডি প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে আমরা কিছু আইনি জটিলতার সম্মুখীন হয়েছি, যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটাও প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির অন্যতম কারণ।’

প্রকল্পের শুরু যেভাবে

ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরি এবং সমন্বিত শিক্ষাতথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রণয়ন করতে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এর নাম ‘এস্টাবলিশমেন্ট অফ ইনটিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ সংক্ষেপে আইইআইএমএস। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারিত ছিল চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত অর্থাৎ এ প্রকল্পের মেয়াদ ৪ বছর। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ৩৫৩ কোটি ২১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা হচ্ছে ইউনিক আইডি।

ইউনিক আইডি কেন

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর জন্য একটি ‘ইউনিক আইডি’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত সব তথ্য থাকবে। শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে এই আইডিই জাতীয় পরিচয়পত্রে রূপান্তরিত হবে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদা দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর একটি (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের) বাস্তবায়নের দায়িত্বে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস), অপরটি (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

কেন শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিক আইডি তৈরি করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করলেই স্থানীয় সরকার বিভাগের অফিস অফ রেজিস্ট্রার জেনারেলের আওতায় তার জন্মনিবন্ধন হয়। আর ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া সবার জন্য আছে জাতীয় পরিচয়পত্র। কিন্তু যারা প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী, অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮-এর নিচে তারা এই সিস্টেমের বাইরে। এ জন্য তাদের সিস্টেমের মধ্যে আনতেই ইউনিক আইডি তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর