চলে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফি। সোমবার মধ্যরাতে রাজধানীর এক হাসপাসাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে নিজের জমানো অর্থ ব্যয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের ভবন নির্মাণ করে দিয়েছিলেন এই শিক্ষাবিদ। তিনি ওই বিভাগেরই প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগটি অধ্যাপক শফির হাত ধরেই ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে। ২০০০ সালে নিজস্ব ভবন তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। বিভাগের পাঁচতলা ভবনের ভিতসহ একতলার কাজ করতেই সেই বরাদ্দ অর্থ শেষ হয়ে যায়। এরপর অর্থাভাবে প্রায় ১৫ বছর আটকে ছিল এই ভবনের নির্মাণ কাজ।
অধ্যাপক শফি নিজের উপার্জন থেকে জমানো প্রায় ৭০ লাখ টাকা দিয়ে ২০১৪ সালে সেই কাজ আবার শুরু করেন। ২০০৫ সালে তিনি অবসরে যান।
অধ্যাপক মোহাম্মদ শফি তার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়াননি। শ্রেণীকক্ষে পড়ানো, বিভাগের উন্নয়ন আর গবেষণা নিয়েই শিক্ষকতা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তার পাঁচটি গবেষণাগ্রন্থ, একটি আত্মজীবনী ও ৭০টির মতো প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন লাখ টাকায় গঠন করেন ‘আমেনা-লতিফ ট্রাস্ট ফান্ড’। সেখান থেকে প্রতিবছর মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের তিনজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়। পরের বছর নিজের নামে গঠন করেন ‘ড. মোহাম্মদ শফি ট্রাস্ট ফান্ড’। এখান থেকেও দুজন কৃতী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়।
এই মহানুভব অধ্যাপকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান।
শোকবার্তায় উপাচার্য বলেন, ‘অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফি ছিলেন একজন প্রখ্যাত মৎস্যবিজ্ঞানী এবং নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও গবেষক। অত্যন্ত বিনয়ী, সজ্জন ও নিষ্ঠাবান এই অধ্যাপক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি বিভাগের অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়নে বিপুল অংকের আর্থিক অনুদান প্রদান করে এক মহতী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
‘বাংলাদেশে মৎস্য বিজ্ঞান গবেষণার পথিকৃৎ এই অধ্যাপক মৎস্যবিজ্ঞান সংক্রান্ত অনেক মূল্যবান পুস্তক রচনা করেছেন। মৎস্যবিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় অসাধারণ অবদানের জন্য গুণী এই অধ্যাপক স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
উপাচার্য মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের শোক-সন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।