করোনার কারণে গত দুই বছরে শিক্ষা খাতে যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে আরও বেশি বরাদ্দের দাবি উঠেছে। পাশাপাশি শিক্ষা বাজেটকে অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত না করে শুধু পৃথক একটি শিক্ষা বাজেট প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
শিক্ষা বাজেট নিয়ে শনিবার এক আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনরা এমন দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।
‘শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন: কোথায় আছি আমরা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে যৌথভাবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং গণসাক্ষরতা অভিযান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো ড. মুনতাসির কামাল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
বক্তারা বলেন, যখন জাতীয় শিক্ষানীতি করা হয়, তখন শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল জিডিপির আড়াই শতাংশ। বলা হয়েছিল, এই বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে জিডিপির সাড়ে ৪ শতাংশ উন্নীত করা হবে। বর্তমানে সেটা উল্টো কমে দাঁড়িয়েছে দেড় শতাংশে। পৃথিবীর অনেক দেশ, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ ও ব্যয় বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি।
ভারতে বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ সে দেশের জিডিপির পৌনে ৪ শতাংশ, নেপালে সাড়ে ৪ শতাংশ, পাকিস্তানে আড়াই শতাংশ, ব্রাজিলে ৬ শতাংশ ও আফ্রিকার দেশ ঘানায় ৪ শতাংশ।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমি স্বীকার করছি শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অনেক কম। তাই এই খাতে আগামী বাজেটে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।
‘সবাই বলে আমাদের গবেষণা ভালো, নীতি ভালো। কিন্তু মূল সমস্যা বাস্তবায়ন। এখানে আমরা তেমনভাবে জোর দিতে পারছি না এখনও।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বরাদ্দ বাড়াতে হবে এ কথা আমরা সবাই বলছি। কিন্তু টাকাটা কোথা থেকে আসবে সেটা কেউই বলছে না। এটার জন্য আমাদের রাজস্ব আহরণে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও এডুকেশন ওয়াচের সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, ‘অনেক বছর ধরে শিক্ষা আইনের খসড়া ঝুলে আছে। এই আইন কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা খাতে যেসব সমস্যা আছে তা সমাধান করা যাবে না।’
আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। মূল সমস্যা হচ্ছে বাস্তবায়ন। সরকারি কর্মকর্তারা কাজগুলো কেন ঠিকমতো করতে চায় না তা আমার বোধগম্য নয়।’
জাতীয় সংসদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য আরমা দত্ত বলেন, ‘করোনার কারণে যেসব শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে তাদের পুনরায় শিক্ষাজীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।’
বাংলাদেশে শিক্ষা বাজেট অত্যন্ত কম বলে জানান ব্রিটিশ হাইকমিশনার জাবেদ প্যাটেল। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। তা না হলে শিক্ষার সমান সুযোগ তৈরি হবে না।’
শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হলে বাংলাদেশে সরকারকে নিজস্ব সম্পদ আহরণে আরও বেশি নজর দিতে হবে বলে জানান এই ব্রিটিশ কূটনীতিক।
ইউনিসেফের ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ভিরা মেন্ডকা বলেন, ‘বাংলাদেশ বাজেটের বেশির ভাগ টাকা খরচ হয় অর্থবছরের শেষ দিকে। এই টাকা বছরের প্রথম দিকে কেন খরচ হয় না সেটা নিয়ে আরও বিচার-বিশ্লেষণ দরকার।’
শিক্ষায় কীভাবে টাকা ব্যয় হচ্ছে এবং কোথায় খরচ হচ্ছে, সে বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন ভিরা মেন্ডকা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বাল্যবিবাহের হার বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। আমরা এটা দেখতে চাই না।’