বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব পদ থেকে রহমতুল্লাহর অব্যাহতি চায় ছাত্রলীগ

  •    
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ১৭:২০

সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামে এটি উচ্চারিত হয়েছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যায় জড়িত খন্দকার মোশতাক আহমেদকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রহমতুল্লাহর দেয়া বক্তব্যকে ধৃষ্টতাপূর্ণ দাবি করে তার বক্তব্য প্রত্যাহার ও তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রলীগ।

সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে স্মারকলিপি দিতে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের কার্যালয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েক শ নেতাকর্মী।

স্মারকলিপি দেয়ার আগে উপাচার্যকে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির বক্তব্য আমাদের ছাত্রসমাজকে অনেক আঘাত করেছে। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটিকে কেন্দ্র করে তার যে বক্তব্য, আমি মনে করি সেটা যথেষ্ট না।

‘খন্দকার মোশতাকের মতো ঘৃণিত এক ব্যক্তির নাম যখন কেউ সচেতন বা অচেতন মনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল একটি প্ল্যাটফর্মে উচ্চারণ করে, আমাদের মনে হয় এটির জন্য ওনার কোনো শুভ উদ্দেশ্য ছিল না। তার এই বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।’

সেই সঙ্গে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামে এটি উচ্চারিত হয়েছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার শপথ নেয়। মেহেরপুরের মুজিবনগরে এই শপথ হওয়ার কারণে দিবসটি মুজিবনগর দিবস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেন অধ্যাপক রহমতুল্লাহ। তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে হয় তর্ক-বিতর্ক।

সভায় উপস্থিত একাধিক অধ্যাপক নিউজবাংলাকে জানান, লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক রহমতুল্লাহ বলেছেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের জাতীয় চার নেতা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’

সভায় উপস্থিত থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সামাদ তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। তিনি এই বক্তব্যকে ধৃষ্টতাপূর্ণ উল্লেখ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের প্রতি এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান। এরপর উপাচার্য শিক্ষক সমিতির সভাপতির বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক সামাদ বলেন, ‘খন্দকার মোশতাকের মতো ব্যক্তির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করে না।’

খন্দকার মোশতাককে নিয়ে দেয়া বক্তব্যে এর পর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। অধ্যাপক রহমতুল্লাহ দাবি করেন, তিনি খন্দকার মোশতাককে নিয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি। মুজিবনগর সরকার নিয়ে কথা বলেছেন, সেখানে মোশতাক একটা অংশ ছিলেন বলে তার নাম উঠে আসে।

সোমবার উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয়া শেষে সাংবাদিকদের ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘অধ্যাপক রহমতুল্লাহ একজন অপ্রকৃতস্থ মানুষ। কারণ যিনি জাতির পিতার খুনির প্রশংসা করতে পারেন, তিনি কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ হতে পারেন না। তাই এ রকম অপ্রকৃতস্থ মানুষকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। অন্যথায় আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবের প্রশ্নে ছাত্রলীগ আপস করবে না।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেই যে তার সবকিছু ঠিক থাকবে এ রকম হতে পারে না। হয়তো ওনার মধ্যে কোনো সমস্যা থাকতেও পারে। সেটা খুঁজে দেখার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান জানাই। আমরা চাই, ওনার সব ধরনের খোঁজখবর নেয়া হোক, উনি কী কারণে খন্দকার মোশতাকের প্রশংসা করেছেন।’

বক্তব্যে সঞ্জিত বলেন, ‘‘উনি নিজেই বক্তব্য দিয়েছেন উনি খন্দকার মোশতাকের কোনো আত্মীয়স্বজন হন না। ‘ঠাকুরঘরে কে রে, আমি কলা খাইনি’ এ রকম অবস্থা। আসলেই খুঁজে দেখা হোক আমাদের রহমতুল্লাহ স্যার কোনোভাবেই খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে জড়িত কি না। যেহেতু উনি অপরাধ করেছেন, সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, সেহেতু অবশ্যই ওনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।’

উপাচার্যকে দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘কুখ্যাত মীর জাফর’ হিসেবে ঘৃণিত খন্দকার মোশতাক আহমেদকে জ্ঞাত-অজ্ঞাতভাবে শ্রদ্ধা জানানোর মতো যেকোনো ঘটনা-বক্তব্যকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করে।

দেশ স্বাধীন করার জন্য জাতির পিতা মুজিবের ডাকে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে অকাতরে, সেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতির পিতার খুনির নাম উচ্চারিত হতে পারে না।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এই ঘটনাকে ধৃষ্টতামূলক বলে মনে করে। একই সঙ্গে কেবল বক্তব্য প্রত্যাহারই নয়, এই বক্তব্যের জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানাচ্ছে।’

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ দৃঢ়ভাবে মনে করে, অধ্যাপক ড. রহমতুল্লাহর আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা নিশ্চিতপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনতিবিলম্বে এ বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন অধ্যাপক রহমতুল্লাহ।

অধ্যাপক রহমতুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে মুজিবনগর সরকারের অবদানের কথা বলতে গিয়ে আমি এই সরকারের মন্ত্রণালয়ে যারা ছিলেন তাদের সবার নাম উচ্চারণ করেছি।

‘তবে সেগুলোর মধ্যে এই নাম (খন্দকার মোশতাক) উচ্চারণ করাটা আমার ইচ্ছার বাইরে ছিল। এটাই হয়তো বা একটি ইস্যু হয়েছে। আমি জানি না আমার ভুলটা কোথায়? যদি এই নাম উচ্চারণ করাটা আমার ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেটির জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’

স্মারকলিপিতে ছাত্রলীগ আরও বলে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মভাবে নিহত তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ, শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং মহান স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করা শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে স্বাধীনতার আঁতুড়ঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যেকোনো প্রকার উদ্দেশ্যমূলক আয়োজন-বক্তব্যকে শিক্ষার্থীরা প্রতিহত করবে। বরাবরের মতোই এতে নেতৃত্ব প্রদান করবে স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অকুতোভয় সংগঠন, শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

এ বিভাগের আরো খবর