মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আজওয়াদ আহনাফ করিমের মৃত্যু তার সহপাঠী-শিক্ষকদের বডি শেমিংয়ের (শারীরিক গড়ন, বর্ণ নিয়ে কাউকে হেয় বা উৎপীড়ন করা) শিকার হয়ে অ্যানোরেক্সিয়া এবং বুলিমিয়ায় হয়েছে কি না তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
ঢাকার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘বডি শেমিং’ থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত। সেই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং রোধে নীতিমালা তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না রুলে সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রোববার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
শিক্ষা সচিব, আইন সচিব, নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সচিব, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
‘মোটা বলে সহপাঠী ও শিক্ষকের লাঞ্ছনার শিকার মৃত কিশোরের পরিবার যা বলছে’ শিরোনামে বিবিসি বাংলায় গত ৮ জুলাই একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। রিটে পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় ‘অ্যানোরেক্সিয়া’ এবং ‘বুলিমিয়ায়’ আক্রান্ত হয়ে এক কিশোরের মৃত্যুর পর তার পরিবার অভিযোগ করেছে, স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের ‘বডি শেমিং’-এর শিকার হওয়ার ফলস্বরূপ এই ঘটনা ঘটেছে। ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট কয়েক হাজার মানুষ শেয়ার করেন, যাদের প্রায় সবাই বডি শেমিং, বুলিয়িংয়ের মত ইস্যুতে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
মৃত কিশোরের বাবা মো. ফজলুল করিম বলেছেন, তার ছেলের ওজন স্বাভাবিকের চাইতে বেশি হবার কারণে, স্কুলে তাকে প্রায় নিয়মিতই বুলিয়িং ও উপহাসের শিকার হতে হত, কিন্তু স্কুলে কখনো এ নিয়ে অভিযোগ জানাননি তারা। এখনো বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ জানাতে চান না তারা। তবে পরিবার চায় স্কুলে বুলিয়িং বন্ধ করার জন্য যেন সরকার ব্যবস্থা নেয়।
পরে ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের প্রতি একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। তবে সে নোটিশের কোনো জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।