করোনাভাইরাস মহামারিতে সরকারি সিদ্ধান্তে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে গাছতলাতেই ক্লাস নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আ. আল মামুন।
শুক্রবার ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন।
আ আল মামুন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘সরকার কী বলল না বলল আমার কিছু যায় আসে না। আমি আগামী সপ্তাহ থেকে প্রতি সোমবার আর মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বিভাগে উপস্থিত থাকব। ক্লাসরুম খুলে না দিলে গাছের তলায় শিক্ষার্থীদের মিট করব এবং তারা পড়তে চাইলে পড়াব। (হুম আপনাদের তথাকথিত স্বাস্থ্যবিধির কথাও মনে রাখব।) সবাইকে আমন্ত্রণ।’
অনলাইনে ক্লাস নেয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়ে আল মামুন লিখেছেন, ‘অনলাইনে ক্লাস নেয়া একটা হরর অভিজ্ঞতা। সপ্তায় আমি অন্তত ৮ ঘণ্টা ক্লাস নিই অনলাইনে। এর জন্য মিনিমাম ৪০ ঘণ্টা পড়ালেখা করি, অনেক সময় তারও বেশি। সেই সাথে ওই পড়ালেখা নিয়া আরও অন্তত ১০ ঘণ্টা টপিকগুলো নিয়ে ভাবি।
‘কিন্তু যখন অনলাইনে ক্লাস নিতে যাই- কোনো শিক্ষার্থীর চেহারা দেখতে পাই না, তারা প্রায় কথা বলে না। একটা ডার্ক স্ক্রিনের সামনে বকরবকর করি। তবু আমি এই মহামারি সময়ে পড়ানোর ব্যাপারে খুব সিরিয়াস হয়ে উঠেছি- শিক্ষার্থীদেরকে বুঝাইতে চাই আমার ভাবনাগুলো। কিন্তু আদৌ কিছু বুঝাইতে পারি কিনা তা কিছুই অনুমান করতে পারি না। সবই পণ্ডশ্রম মনে হয়। অন্য দেশের বাস্তবতা জানিনা, আমাদের বাস্তবতা এরকমই!’
তিনি লিখেছেন, অনলাইনে পড়াইতে পড়াইতে মনে হয় বদ্রিয়া কথিত সিমুলাক্রার দুনিয়ায় প্রবেশ করে গিয়েছি! আমিও আমি না, আমার শিক্ষার্থীরাও কেউ না- জাস্ট কিছু ডটডটড্যাশ! এরও আগের তাত্ত্বিক গাই দেবর্দোর 'সোসাইটি অব স্পেক্টেকাল' এর কথা নিশ্চয় আমি স্মরণ করব। মনে হয় একটা ভূত হয়ে অদ্ভুত উপায়ে ডার্ক স্ক্রিন নামক ভূতের সাথে বসবাস করছি। ক্লাস শেষ করে নিজেকে চিনতে পারি না!
‘সিমুলাক্রার এই দুনিয়া আমি চাই না, আমি চোখে চোখ রেখে পড়াতে চাই, তাদের প্রতিক্রিয়া বুঝতে চাই, তাদের আবেগ ও অনুভবকে স্পর্শ করতে চাই। আমি মানবিক থাকতে চাই।’
এর আগে ২০০৭ সালে আগস্টে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জারি করা জরুরি অবস্থা বিরোধী মিছিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয়ায় কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন এই শিক্ষক।