করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শতভাগ টিকা দেয়া সম্ভব হলে প্রথমেই খোলা হবে বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর খুলবে অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সেপ্টেম্বর মাসে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার বিষয় আলোচনায় থাকলেও করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনায় সেটির সম্ভাবনা কম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা এবং চলতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হচ্ছে। এরপর মাধ্যমিক, নিম্নমাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খোলা হবে তা নিয়ে আগাম কিছু বলতে চাই না। ভ্যাকসিন কার্যক্রম জোরেশোরে চলছে।
‘পরিস্থিতি যখনই অনুকূলে আসবে যখনই ঘোষণা দেয়া হবে, তবে ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। চলমান ছুটি শেষ হওয়ার পর সেপ্টেম্বর মাসে সব কিছু ক্লিয়ার হবে।’
শিক্ষার্থীদের টিকাদান প্রসঙ্গে শনিবার এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, সরকারি পর্যায়ের প্রায় শতভাগ শিক্ষক টিকা নিয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন লাখ ৬৩ হাজার ২২২ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ৭৮ হাজার ৪২৬ জন। বাকি আছেন প্রায় ৮৪ হাজার জন।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ হাজারের বেশি শিক্ষক টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে টিকা নিয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি।
শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, টিকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ছয় হাজার ৭২ জন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৭ মাস বন্ধ থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছু হটতে হয়েছে।
‘করোনার এখন যে সংক্রমণ চলছে, সেটা কমে আসলে আমরা স্কুলগুলো খুলে দিতে চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া শেষ হলেই অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া শুরু হবে। এরপর কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে।’
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি আরও এক দফা বাড়িয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছুটি চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সেই সঙ্গে কঠোর লকডাউন কার্যকর থাকায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের সুরক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনা করে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এবতেদায়ি ও কওমি মাদ্রাসাগুলোর ছুটি আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
দেশে করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে দফায় দফায় তা বাড়ানো হয়।
চলতি বছরের শুরুর দিকে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে কয়েক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত আসে, তবে শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে উঠেনি।
এখন সেপ্টেম্বর মাসে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খেলার বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় এনে তারপরই প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।