মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মকর্তার প্রায় একশ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনেদেনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই কর্মকর্তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
মতিঝিল আইডিয়ালের ওই কর্মকর্তার নাম আতিকুর রহমান খান। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০০৪ সালে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগ দেন।
পাশাপাশি ২০১৫ সাল থেকে আতিক প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এমপিওভুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কোনো পদ নেই। অভিযোগ, অবৈধভাবে এই পদ সৃষ্টি করে ওই পদেও নিয়োগ নেন আতিক।
মতিঝিল আইডিয়ালে চাকরি নেয়ার পর আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে আতিকের। তার নাম এখন কোটিপতিদের তালিকায়। ঢাকায় একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাটের মালিক তিনি; ব্যবহার করেন দামি গাড়ি।
দুদক বলছে, দেশের ১৫টি ব্যাংকে আতিকুর রহমানের ৯৭টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংকে ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের ২৮ মার্চ পর্যন্ত ১১০ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৯২ টাকা লেনদেন হয়েছে।
সামান্য বেতনের চাকরি করে আতিকের বিশাল অর্থ-সম্পদ অর্জনের বিষয়টি নজরে এসেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগেরও। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে তারা।
এ বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহীন আরা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।’
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সবকিছুতে ব্যাপক আধিপত্য আতিকুরের
আতিকের অঢেল সম্পদের তদন্তে নেমেছে দুদক। তার বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে রোববার ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে আবেদন করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সহকারি পরিচালক মাহবুবুল আলম।
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানকালে আতিক যাতে বিদেশে যেতে না পারেন সেজন্য আদালত তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানান দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
আতিককে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অবৈধ ভর্তিসহ সব বাণিজ্যের হোতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দুদকের অভিযোগে।
এতে বলা হয়েছে, তিনটি ক্যাম্পাসের প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর ড্রেস (পোশাক), ক্যান্টিন, লাইব্রেরি সবই বেনামে তার নিয়ন্ত্রণে। এমনকি স্কুলের সামনে ফুটপাতে শতাধিক দোকান বসিয়েও তিনি আয় করেন মোটা অঙ্কের টাকা। এ ছাড়া, প্রতিষ্ঠানে যত ধরনের কেনাকাটা, উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ হয় তার সবই করেন আতিক। দরপত্রেও অংশ নেয় নামে-বেনামে তারই প্রতিষ্ঠান। সেখানে চলে বড় ধরনের লুটপাট।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ১২ বছরে প্রতিষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং কর্মচারী নিয়োগে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। এর বেশির ভাগই হয়েছে আতিকের মাধ্যমে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সকল শাখাকেই জিম্মি করে রেখেছেন তিনি।