বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উদ্বোধনের ১০ মাসেও হস্তান্তর হয়নি জবির হল

  •    
  • ৮ আগস্ট, ২০২১ ১৩:৫৯

গত বছর ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ছাত্রী হলের উদ্বোধন করেন। এরপর দুজন শিক্ষক প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করেন। একজনের দায়িত্ব শেষ হয়েছে, অন্যজন দায়িত্বে রয়েছেন। নীতিমালা তৈরির জন্য তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দায়িত্বও দেয়া হয়।

অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা ঘোঁচাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আবাসিক ছাত্রী হলের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। কাজ ২০১৩ সালের মধ্যেই শেষ করে ছাত্রীদের ওঠানোর কথা থাকলেও সেই কাজ শেষ হতে সময় লেগেছে ১০ বছর।

অবশ্য পুরো নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয়নি। তার আগেই হলটি উদ্বোধন করা হয় ১০ মাস আগে। কাজ শুরুর ১০ বছর এমনকি উদ্বোধনের ১০ মাসেও হলে শিক্ষার্থীদের ওঠার মতো পরিবেশ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

ছাত্রীদের হলে ওঠার জন্য যে নীতিমালা সেটি চূড়ান্ত হয়নি। এমনকি পুরো কাজ শেষ করে হল হস্তান্তরও করতে পারেনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)।

গত বছর ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ছাত্রী হলের উদ্বোধন করেন। এরপর দুজন শিক্ষক প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। একজনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আরেকজন দায়িত্বে রয়েছেন। নীতিমালা তৈরির জন্য তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দায়িত্বও দেয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীতিমালা তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করে দেয়া কমিটির কাজ শেষ। তবে লকডাউনের জন্য নীতিমালা নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বসতে পারছে না কমিটি। এমনকি হলের নির্মাণকাজও পুরোটা শেষ হয়নি।

এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হলে শিক্ষার্থী ওঠা নিয়ে দ্বিধা রয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ তলার ছাত্রী হল। ছবি: নিউজবাংলা

বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নীতিমালা তৈরির কাজ শেষ। আমরা লকডাউনের জন্য উপাচার্যের সঙ্গে বসতে পারিনি। ১০ আগস্ট লকডাউন শেষ হলে আমরা বসব। আর নীতিমালা অনুমোদন হয় সিন্ডিকেটে, এই লকডাউনের জন্য সিন্ডিকেটও পিছিয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হলের আসবাবপত্রের জন্যও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোনো আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে থাকলে সেগুলো পরিবর্তন করে দেয়া হবে।

ছাত্রী হলের কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী (পিইঞ্জ) নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঠিকাদার ও ইইডি হলটি হস্তান্তর করার জন্য লোক পাঠিয়েছিল। আমরা তখন এভাবে হলটি নিতে চাইনি। আমি তাদের বলি যে, আপনাদের লোক দেন আর আমি ইঞ্জিনিয়ার দিই।

‘আমরা যৌথ টিম মিলে আগে ভিজিট করি, সব কাজ ঠিকমতো হয়েছে কি না। তারপর হল পরিদর্শন করে যেসব ত্রুটি রয়েছে সেগুলোর তালিকা করে সংশোধনের জন্য বলা হয়। এরপর তারা কাজ ধরেছে। এখনও শতভাগ কাজ হয়নি।’

লকডাউনের কারণে অগ্রগতির খবর নেয়া হয়নি, লকডাউন শেষে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

২০১১ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র আবাসিক হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে উপস্থিতরা। ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, ‘আসবাবপত্রের ব্যাপারে একটু ঝামেলা হয়েছিল। কিছু ত্রুটি ধরে পড়ে। আসবাব সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফআইডিসি), তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা মেরামত করে দিলে বুঝে নেয়া হবে।’

হল হস্তান্তরসহ সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হল এখনও হস্তান্তর হয়নি। অনেক ফার্নিচার তারা ঠিক মতো দেয়নি। আমি একটি বড় কমিটি করে দিয়েছি। প্রভোস্ট, চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকও রয়েছেন কমিটিতে।

‘কমিটি সব বুঝে নেবে, যেন পরে বলতে না পারে যে এইটা খারাপ, ওইটা খারাপ। এখন একদম যেগুলো নষ্ট, সেগুলো ক্লিয়ার করে বুঝে নেবে। স্টুডেন্ট ওঠার আগেই সব বুঝে নেবেন প্রভোস্ট, যেন দ্বিতীয়বার আর ঝামেলা না হয়।’

হলে শিক্ষার্থী তোলার ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় না খুললে তো আর শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে শিক্ষার্থী তোলার প্রশ্ন। আগে আমরা হল বুঝে নিই, বুঝে নেয়ার পর সিট বণ্টনসহ আরও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো দেখব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর থেকে জানা গেছে, ২০ তলা ভিত্তির ওপর ১৬ তলা ভবনের হলটির নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ৩৬ মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের ভার দেয়া হয় শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তরকে।

১৬ তলা হলটির ১৫৬টি কক্ষে চারজন করে ৬২৪ জন ছাত্রী থাকতে পারবেন। হলের তৃতীয় থেকে ১৬ তলা পর্যন্ত ছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আর নিচতলা ও দোতলায় রয়েছে লাইব্রেরি, ক্যানটিন, ডাইনিং।

এ ছাড়া প্রতি তলায় সাতটি করে টয়লেট ও আটটি গোসলখানা রয়েছে। ভবনটিতে চারটি লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে। হলটির প্রথম হল প্রভোস্টের দায়িত্ব পেয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম।

২০০৯ ও ২০১১ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ছাত্রী হল নির্মাণের ঘোষণা আসে। ২০১১ সালেই শুরু হয় ছাত্রী হল প্রকল্পের কাজ। পরে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, ৩/১, লিয়াকত অ্যাভিনিউয়ের ২৩ কাঠা জায়গাটির অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা ওই সময় ছাত্রী হলের ব্যানার টাঙিয়ে জায়গাটি দখলে নেন।

২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট জায়গাটিতে ‘বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ ছাত্রী হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। ওইদিন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠকে এক হাজার ছাত্রীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০ তলা ফাউন্ডেশনের দুটি টাওয়ার নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর এ হলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর এক বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হলটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়।

হল নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম দফায় মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয় মেয়াদ ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন। তৃতীয় দফায় ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয় মেয়াদ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।

২০১৯ সালেও কাজ শেষ না হলে ২০২০ সালেও অতিরিক্ত সময়ে কাজ চলতে থাকে। শুরুতে এই হলের নির্মাণব্যয় ৩৩ কোটি টাকা ধরা হলেও কাজ শেষ করতে ৩৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান হলটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের সাব অ্যাসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ হোসেন।

এ বিভাগের আরো খবর