দুধ ও মদ নিয়ে বহুল প্রচলিত কৌতুক ফেসবুকে শেয়ার করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনের বিরুদ্ধে হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন প্রতিবাদ জানালেও কোন বক্তব্য নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রহমতুল্লাহ বলছেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই। শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে সবকিছু দেখা যায় না। সবকিছু আমার দেখার বিষয়ইও না৷’
রহমতুল্লাহ বলেন, ‘সম্প্রতি কী ঘটেছে সেটি আমি জানি না। জানতেও চাই না৷ এখন আমার একমাত্র দুঃশ্চিন্তার বিষয় করোনার কারণে আমার অনুষদের (আইন অনুষদ) শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ দেড় বছর ঝুলে আছে। এদের জীবনে কী হবে সেটাই আমার অনেক বড় চিন্তা৷’
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভুইয়াকে শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ৭ বার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি৷ বিষয়টি উল্লেখ করে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোন জবাব দেননি অধ্যাপক নিজামুল।
অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন আইন বিভাগের অধ্যাপক। এ বিষয়ে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলামেরও (আসিফ নজরুল) কোন মন্তব্য নেই।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটি আমার কোন বিষয় না, স্যারের ব্যাক্তিগত বিষয়৷ এ বিষয়ে আমার কোন কমেন্ট নেই।’
গত ২ আগস্ট বাংলাদেশ হিন্দু যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিত ভৌমিক সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে অধ্যাপক কার্জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।
এর আগে গত ২৩ জুলাই অধ্যাপক কার্জন নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে মদ ও দুধ-সম্পর্কিত বহুল প্রচলিত একটি কৌতুক শেয়ার করেন। এই পোস্টকেই কেন্দ্র করে মূলত তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়।
মামলার এজাহারে বাদী অমিত ভৌমিক বলেন, হাফিজুর রহমান কার্জন সনাতন ধর্মের ভগবানকে হেয়প্রতিপন্ন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন, যা সারা বিশ্বে কোটি কোটি সনাতন ধর্মীয়দের অনুভূতিতে ব্যাপক আঘাতের শামিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, ধর্মীয় উগ্রবাদ সৃষ্টি, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল এবং সরকারকে বিব্রত করার মানসে স্বজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় হাফিজুর রহমান কার্জন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতমূলক কুরুচিপূর্ণ এ পোস্ট করেছেন।
মামলার বিষয়ে গত ৩ আগস্ট অধ্যাপক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ফেসবুক পোস্টটা আমার নিজের না। অন্য জায়গা থেকে শেয়ার করেছি৷ এটি আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল। এটির জন্য ইতোমধ্যে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। সেখানেই বিষয়টা থেমে যাওয়া উচিত ছিল। এরপরও মামলা করা এটি আমাকে হয়রানি এবং অসৎ উদ্দেশ্যের জন্য।’
এই অধ্যাপক আরো বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কারও ধর্মে আঘাত দেয়া আমার ব্যক্তিগত নৈতিকতা বিরোধী। তবে আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখন যেহেতু মামলা হয়েছে, আইন যেভাবে বলবে সেভাবে আমি নির্দেশনা মেনে চলব।’