মদ ও দুধ সম্পর্কিত বহুল প্রচলিত একটি কৌতুক ফেসবুকে শেয়ার করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু যুব পরিষদের এক নেতা।
রোববার শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অমিত ভৌমিক। বিষয়টি তিনি নিজেই নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন। মামলাটি তদন্ত করবেন শাহবাগ থানার এসআই (নিরস্ত্র) আরিফুল ইসলাম অপু।
নিউজবাংলাকে অমিত ভৌমিক বলেন, ‘কার্জন সাহেবের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ এবং ৩১ ধারায় মামলা করেছি। শনিবার রাতেই মামলাটি আমরা করি। তবে শাহবাগ থানার ওসি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে থাকায় মামলাটি রোববার হয়েছে। বিকেলে আমরা মামলার কপি গ্রহণ করি।’
এ বিষয়ে জানতে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হালদারকে ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
২৩ জুলাই অধ্যাপক কার্জন নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে মদ ও দুধ-সম্পর্কিত বহুল প্রচলিত একটি কৌতুক শেয়ার করেন। এই পোস্টকেই কেন্দ্র করে মূলত তার বিরুদ্ধে সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ আনা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, হাফিজুর রহমান কার্জন সনাতন ধর্মের ভগবানকে হেয়প্রতিপন্ন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন, যা সারা বিশ্বে কোটি কোটি সনাতন ধর্মীয়দের অনুভূতিতে ব্যাপক আঘাতের শামিল।
এতে আরও বলা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, ধর্মীয় উগ্রবাদ সৃষ্টি, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল এবং সরকারকে বিব্রত করার মানসে স্বজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় হাফিজুর রহমান কার্জন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতমূলক কুরুচিপূর্ণ এ পোস্ট করেছেন।
এজাহরে কার্জনের শেয়ার করা সেই ফেসবুক পোস্টটিও যুক্ত করা হয়েছে।
মামলার বিষয়ে অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘ফেসবুক পোস্টটা আমার নিজের না। অন্য জায়গা থেকে শেয়ার করেছি৷ এটি আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল। এটির জন্য ইতোমধ্যে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। সেখানেই বিষয়টা থেমে যাওয়া উচিত ছিল। এরপরও মামলা করা এটি আমাকে হয়রানি এবং অসৎ উদ্দেশ্যের জন্য।’
এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কারও ধর্মে আঘাত দেয়া আমার ব্যক্তিগত নৈতিকতা বিরোধী। তবে আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখন যেহেতু মামলা হয়েছে, আইন যেভাবে বলবে সেভাবে আমি নির্দেশনা মেনে চলব।’
কার্জন বলেন, ‘তবে আমার একটি মানবিক আবেদন, আমি করোনায় আক্রান্ত। বর্তমানে বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছি৷ এ বিবেচনায় আমাকে যেন কোনো হয়রানি না করা হয়।’
হাফিজুর রহমান কার্জনের পোস্টটির পর পরদিন দুপুরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে তার পদত্যাগ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয় বাংলাদেশ হিন্দু আইনজীবী পরিষদ।
পরে ওই দিন বিকেলেই একই অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন হিন্দু যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিত ভৌমিক। তবে পুলিশ এটিকে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে আরও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিটে পাঠিয়েছিল।