জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) স্থগিত হয়ে যাওয়া সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এরই প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষার পদ্ধতি, অভিজ্ঞতা এসব কিছু জানার জন্য ছয় সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সশরীরে পরীক্ষা নেয়া না গেলে বিকল্প হিসেবে অনলাইন পরীক্ষার নেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখার পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছে বলা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুক্রবার রাতে নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক।
নিউজবাংলাকে উপাচার্য বলেন, আমরা তো সশরীরে পরীক্ষা নিতে চাই। কিন্তু দেশের যা অবস্থা সে অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে তো এভাবে পরীক্ষা নিতে পারবো না। এর জন্য অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া যায় কি না সেজন্য একটি কমিটি করে দিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড আইটি দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. উজ্জল কুমার আচার্য্যকে সদস্য সচিব করে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া কমিটিতে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সরকার আলী আককাস, ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল বাকী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মনিরা জাহান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিনকে সদস্য করা হয়েছে।
নিউজবাংলাকে তিনি আরও বলেন, আমরা অনলাইন পরীক্ষা নিতে পারি কী না বা নিলে কীভাবে নিব; কমিটির সদস্যরা এখন এসব নিয়ে কাজ করবেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যারা অনলাইনে পরীক্ষার পরিকল্পনা নিয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে একটা সুপারিশ দেয়া হবে।
‘আমরা তো বলেছি যে যেকোনো পরীক্ষা নেয়ার আগে আমরা কমপক্ষে চার সপ্তাহ আগে নোটিশ দিব। নোটিশ দিয়ে তারপর পরীক্ষার রুটিন দিব। সেটা সশরীরেই হোক আর অনলাইন।’
ইমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, আমরা তাড়াহুড়ো করে কিছু করতে চাচ্ছি না। যে হটাৎ করে করলাম আর কাজ হলো না তা হবে না। এখন ছাত্ররা ঢাকায় আসল পরে পরীক্ষা হলো না তখন তো সমস্যায় পড়বে তারা।
‘আমরা যেটাই করি না কেনো ছাত্রদের যেভাবে ভালো হয় সেভাবেই করবো।’
উপাচার্য নিউজবাংলাকে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব কমিটি রিপোর্ট দিবে। আমরা কমিটির রিপোর্ট পেলে আমাদের সক্ষমতা দেখেশুনে একাডেমিক কাউন্সিলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিব।
ডাটা প্যাকেজ ও নেটওয়ার্কের ব্যাপারে উপাচার্য নিউজবাংলাকে বলেন, নেটওয়ার্ক যাদের ভালো সেটা রবি হোক আর গ্রামীণ প্রয়োজন হলে আমরা তাদের সাথেও কথা বলবো।
কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গঠিত কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মনিরুজ্জামান।
অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মনিরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আমাকে আহ্বায়ক করে নেটওয়ার্ক ও আইটি দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্যকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সরকার আলী আককাস, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মনিরা জাহান, ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল বাকী এবং অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন।
নিউজবাংলাকে তিনি আরও বলেন, আমরা একটা সভা করেছি, এখনও তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি সশরীরে পরীক্ষা না নেওয়া যায় তাহলে অনলাইনে যেতে হবে। এখন অনলাইনে যেতে হলে কীভাবে যাবো, কোন প্রক্রিয়ায় যাবো এটা নিয়েই কাজ করতেছি। অনলাইনেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্রুততার সঙ্গে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তবে পরীক্ষা শুরুর জল্পনা-কল্পনার সময় থেকেই অনলাইনে পরীক্ষার বিরোধিতা করে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কমিটির সদস্য ছাড়া অন্য কোনো ডিন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সিনিয়র শিক্ষকও অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে নিজ নিজ ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে মন্তব্য জানাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি দুটো মিড টার্ম পরীক্ষা গুগল ক্লাশরুমে গুগল ফর্ম ব্যবহার করে নিলাম। আমার প্রশ্নপত্রে অবশ্য কিছু বহুনির্বাচনী ও কিছু ছোট প্রশ্ন ছিল। সেখানে হাতে লিখা ফাইল আপলোড করার ব্যবস্থাও আছে। কাজেই মনে হচ্ছে তত্বীয় পরীক্ষা এভাবে এই ফর্মে নেয়া যেতে পারে। অবশ্য আমি এই ব্যবস্থায় একেবারেই নতুন। এক্সপার্টদের আরও বিস্তারিত মতামত নেয়া যেতে পারে।’
এ দিকে চলতি বছরের মে-জুন মাস থেকেই শুরু হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা এমনকি নীতিগত সিদ্ধান্তের খবর পাওয়া যায়। তবে এ বছরের ১৩ জুন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে ১০ আগস্ট থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আটকে থাকা সকল সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
তার প্রায় এক মাস পর ১২ জুলাই অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনদের এক জরুরি সভায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি বিবেচনায় ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং পরীক্ষা শুরুর পূর্বে চার সপ্তাহ সময় দিয়ে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।