করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ মাদ্রাসা রয়েছে নানা সংকটে। তবে কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া সংগ্রহ সন্তোষজনক হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোতে।
দেশের প্রায় সব কওমি মাদ্রাসায় খরচ জোগাতে প্রতিবছর কোরবানির ঈদে সংগ্রহ করা হয় পশুর চামড়া। বিনা মূল্যে পাওয়া এসব চামড়া বিক্রি করে বড় অঙ্কের টাকা মেলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের। করোনাকালে বেশির ভাগ মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় এ বছর চামড়া সংগ্রহ নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। তবে কোরবানির ঈদে চামড়ার সংগ্রহ সন্তোষজনক ছিল বলে জানান মাদ্রাসাসংশ্লিষ্টরা।
মাদ্রাসার পরিচালকরা জানান, করোনাভাইরাস মহামারির সময় কোরবানির চামড়া সংগ্রহে এবার খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। বাজারে চামড়ার দাম একেবারে কম থাকায় অনেকেই তা মাদ্রাসায় দান করেছেন। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। যদিও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ নিজস্ব জনবল এবার মাঠপর্যায়ে চামড়া সংগ্রহে নামতে পারেনি। সরকারি ছুটি থাকায় বন্ধ ছিল বেশির ভাগ মাদ্রাসা। পরিস্থিতি বিবেচনায় মানুষ চামড়া নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দিয়েছেন মাদ্রাসায়।
কওমি মাদ্রাসাগুলো মূলত স্থানীয় সাহায্য, অনুদান ও শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। কোরবানির ঈদে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নিজ এলাকায় ঘুরে ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করেন। করোনা পরিস্থিতিতে মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় এবার চামড়া সংগ্রহ তেমন হবে না বলে ধরে নিয়েছিলেন মাদ্রাসার পরিচালকরা। তবে ঈদের পরে তাদের অনেকেই বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার চামড়া বেশি মিলেছে।
রাজধানীর আদাবরে অবস্থিত হোসেইনিয়া নূরানীয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা। সেখানকার অধ্যক্ষ হাফেজ দবির উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোরবানির পশুর চামড়া মাদ্রাসার আশপাশের বাসিন্দারা এমনিতেই দিয়ে গেছেন। এবার ৮৫টি গরুর চামড়া হয়েছিল, আর খাসির চামড়া ছিল ১০০-এর ওপরে। গরুর চামড়া ৫৩০ টাকা করে নিয়ে গেলেও ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করতে পেরেছেন ৪৭০ টাকায়। তবে তারা মাদ্রাসার কাছে আর টাকা ফেরত চাননি।’
রাজশাহীর দরগাপাড়ার জামিয়া ইসলামিয়া শাহ মখদুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি শাহাদাৎ আলী বলেন, ‘কোরবানির ঈদে দুই দিনে চামড়া বিক্রি করে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে। আমরা মোট ২৫০টি গরুর চামড়া ও ৩০০ খাসির চামড়া পেয়েছি। দাম কিছুটা কম হলেও সব চামড়া বিক্রি হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসা বন্ধ থাকার কারণে মানুষের মধ্যে সহানুভূতি কাজ করেছে। আমরা চামড়া কেনার চেষ্টা করিনি, স্বেচ্ছায় যারা দিয়েছেন, তাদের চামড়া বিক্রি করে টাকা জমা করেছি। অনেকে নিজে চামড়া বিক্রি করে টাকা জমা দিয়ে গেছেন। এবার বেশি টাকা সংগ্রহ হয়েছে।’
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কাশিপুর পীরবাড়ি মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের তো আলিয়া মাদ্রাসা, আমরা ব্যাপকভাবে চামড়া সংগ্রহ করি না। তারপরও অনেকে মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় সহানুভূতি নিয়ে চামড়া দিয়ে গেছেন।’
রংপুরের জুম্মাপাড়ার আল জামিয়াতুল করীমিয়া নূরুল উলুস মাদ্রাসার মুহতামীম ইদরিস আলী বলেন, ‘লোকেরা নিজেরাই মাদ্রাসায় চামড়া দিয়ে গেছে। গত বছর ১ হাজার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছিল, এবার হয়েছে ১ হাজার ৭৫টি। গত বছরের তুলনায় দামও একটু ভালো পাওয়া গেছে। চামড়া বিক্রি করে প্রায় ৫ লাখ টাকা হয়েছে।’
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ফতেপুর মাদ্রাসার আলেম মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘এলাকার লোকজন যেসব চামড়া দিয়েছেন, তার দাম পাওয়া যায়নি। অল্প দামেই তা বিক্রি করেছি।’