ফাহমিদা আহমেদ। পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ইডেন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে। হঠাৎ করে করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় তার কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। আর এই সময়কে কাজে লাগাতে ফাহমিদা সিদ্ধান্ত নেন ইংরেজি শেখার।
কিন্তু করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকায় তিনি পড়ে যান অনিশ্চয়তায়।
এ সময় এক বন্ধুর পরামর্শে ফাহমিদা ইউটিউবভিত্তিক অনলাইন লার্নিং নেটওয়ার্ক-গুরুকুলে যুক্ত হন ইংরেজি শিখতে। এখনও থেমে নেই তার ইংরেজি শেখা।
শুধু ফাহমিদা নয়, করোনার এই সময়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীর পড়াশোনার অন্যতম প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে গুরুকুল অনলাইন লার্নিং নেটওয়ার্ক (জিওএলএন)। প্রায় পঞ্চাশটি ইউটিউব চ্যানেল ও পেজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব শিক্ষা ব্যবস্থার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাস পরিচালনা করছে গুরুকুল।
পুরোটাই উন্মুক্ত। কোনো অর্থ খরচের ব্যাপার নেই।
যাত্রা শুরু যেভাবে
বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষাকে ডিজিটাল ক্লাসরুমে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে গুরুকুল অনলাইন লার্নিং নেটওয়ার্ক। উদ্দেশ্য বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পলিটেকনিক, ভোকেশনাল ও শর্ট-কোর্সসমুহের সিভিল, ইলেক্ট্রিক্যাল, কম্পিউটার, টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, অটোমোবাইল ও ফুড বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কোর্সগুলোর বিষয়বস্তু সহজ করে ইউটিউবে সাধারণের জন্য শেখার ব্যবস্থা করা। একই সময়ে বিউটিফিকেশন, ড্রেস-মেকিং ও শরীরচর্চার মতো প্রয়োজনীয় শর্ট কোর্সগুলোও প্রকাশ করে গুরুকুল অনলাইন লার্নিং নেটওয়ার্ক।
গুরুকুলে যা শেখানো হয়
কারিগরি শিক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষার সব বিষয়, যেমন বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, ব্যবসায় শিক্ষা, হিসাবরক্ষণের মতো বিষয়ের জন্য গুরুকুলের রয়েছে বিষয়ভিত্তিক চ্যানেল ও পাতা।
এর পাশাপাশি গুরুকুল কাজ করছে বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আলিয়া ও কওমি শিক্ষা নিয়েও। এছাড়া গুরুকুলে রয়েছে চাকরি ও প্রতিযোগিতমুলক অন্যান্য পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সময়োপযোগী ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেল ও পাতা।
এই নেটওয়ার্কের ‘সঙ্গীত গুরুকুল’ আউটলেটটি ইতোমধ্যে পেয়েছে দর্শকপ্রিয়তা। বিভিন্ন দেশের ভাষা শেখানোর জন্য এই অনলাইন প্লাটফর্মের রয়েছে ‘আন্তর্জাতিক ভাষা হাব’ নামে স্বতন্ত্র চ্যানেল।
এ ছাড়া করোনাকালীন গুরুকুল অনলাইন লার্নিং নেটওয়ার্ক বিভিন্ন শ্রেণির ইংরেজি মাধ্যমের ক্লাসও প্রচার করছে। বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য বাংলা ভাষার ক্লাসের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাভাষীদের জন্যও কোর্স তৈরি করছে এই অনলাইন নেটওয়ার্কটি।
ইতোমধ্যে যোগ ব্যায়াম, সেতার শিক্ষার মতো ব্যতিক্রমী কোর্সও চালু হয়েছে এই প্ল্যাটফর্মে। এই নেটওয়ার্কের বর্তমানে প্রকাশিত ভিডিওর সংখ্যা ৭ হাজার।
কেন অনন্য গুরুকুল
বাংলাদেশে অনেকগুলো অনলাইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও এতো বিস্তৃত পরিসরে সব শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এর আগে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাজ করেনি। তাছাড়া কন্টেন্ট প্রেজেন্টেশনেও গুরুকুলের রয়েছে অভিনবত্ব।
প্রত্যেক ধরনের টার্গেট অডিয়েন্সের জন্য গুরুকুলের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আউটলেট, অর্থাৎ চ্যানেলে ও ফেসবুক পেজ। করোনার শুরুতে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ ও পরবর্তীতে ‘ঘরে ঘরে কারিগরি শিক্ষা’ প্রকল্পে অন্যতম প্রধান সহযোগী হিসেবে কন্টেন্ট সরবরাহ করেছে গুরুকুল অনলাইন লার্নিং নেটওয়ার্ক।
বর্তমানে গুরুকুলের বিভিন্ন পাতা ও চ্যানেলে যুক্ত আছেন ২৩ লাখের বেশি গ্রাহক। এটি চলছে ফ্রি মডেলে। তবে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এটি ভবিষ্যতে চলবে ফ্রিমিয়াম মডেলে। অর্থাৎ সব সাধারণ কোর্স ফ্রি তে পাওয়া যাবে, ভ্যালু অ্যাডেড সেবা বা প্রিমিয়াম কোর্স নিতে হলে গ্রাহককে মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
গুরুকুলের ভবিষ্যত পরিকল্পনা
ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে গুরুকুল অনলাইন লার্নিং নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২২ সালের মধ্যে দেশের সব শিক্ষা ব্যবস্থার, সব ধরণের লেখাপড়ার ডিজিটাল ক্লাস অনলাইনে দিয়ে দেয়া। করোনার জন্য টার্গেট থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছি, যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গতি বাড়িয়ে ধরতে হবে। তবে করোনার কারণে ব্যবহারকারী এবং ব্যবহারের হার দুটোই টার্গেটের চেয়ে বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভাষা ও পেডাগজিতেও ভিন্নতা রাখছি, যাতে শহুরে তরুণদের পাশাপাশি গ্রামের তরুণরাও সহজে তা গ্রহণ করতে পারে। আমরা শুরু থেকেই আলাদা আলাদা চ্যানেলে যাচ্ছি, যেন ব্যবহারকারী শুধুমাত্র তার আগ্রহের কন্টেন্টই সাবস্ক্রাইব করতে পারেন এবং অকারণ নোটিফিকেশনে বিরক্ত না হন।’
যেভাবে যুক্ত হবেন
এই নেটওয়ার্কের মূল চ্যানেল ও পাতার নাম ‘Gurukul Online Learning Network, GOLN’ যেটিকে ‘ইনডেক্স পাতা’ বা ‘ইনডেক্স চ্যানেল’ বলা হয়। সকল চ্যানেল বা পাতাকে বলা হয় এক একটি কন্টেইনার। নেটওয়ার্কের প্রায় প্রতিটি পাতা বা চ্যানেলের নামের শেষে রয়েছে ‘গুরুকুল’ শব্দটি, যেমন ‘বাংলা গুরুকুল’, ‘ইংরেজি গুরুকুল’ বা ‘গণিত গুরুকুল’। এছাড়া প্রতিটি চ্যানেলের নামের শেষে নেটওয়ার্কের চ্যানেল বোঝাতে ‘GOLN’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে তাদের একটি স্বতন্ত্র চ্যানেলও আছে, যার নাম ‘গুরুকুল লাইভ’। এই চ্যানেলটিকে বলা হয় মাল্টি পারপাস ব্রডকাস্ট প্লাটফরম।