করোনাকালে লকডাউনে রাজধানীতে অবস্থান করা সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীকে গ্রামে পৌঁছে দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রশাসন। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবশেষ ৯টি গাড়ি বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
নিজ বাড়িতে ফেরা এসব শিক্ষার্থীদের গ্রামেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইমদাদুল হক। সোমবার রাতে নিউজবাংলার সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
সবার সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দিতে পারায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা, প্রক্টরিয়াল টিম, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনরাত পরিশ্রম করে এই কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছেন। তারা ছুটির দিনও কাজ করেছেন।
‘শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করা, বাসের রুট ঠিক করা, বাসের দায়িত্ব দেয়া, প্রতিনিধি ঠিক করা এসব কিছু তারা করেছে। আমরা প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম এবং খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এই সংকট তৈরি না হলে শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দেয়ার চিন্তা আমাদের করতে হতো না। সামনে ঈদ এবং এখন করোনার কঠিন সময়। এ সময় এমনিতে গণপরিবহনের টিকিট পাওয়া যায় না।
‘আবার করোনাভাইরাসের কারণে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলছে। ইচ্ছে করলেও অনেক শিক্ষার্থী যেতে পারত না। আবার রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। এ সব বিবেচনা করেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত তিন দিনে ঢাকায় অবস্থান করা সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীদের বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে জানিয়ে উপাাচার্য বলেন, ‘নিজেদের গাড়িতে শিক্ষার্থীরা গেছে, তাই কষ্ট হলেও তাদের কষ্ট মনে হয় না। এখন তারা বাসায় অবস্থান করছে।
‘গ্রামে অবস্থান করলেও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। উৎসব অবশ্যই করব, তবে নিজেদের নিরাপদ রেখে করব।’
শিক্ষার্থীদের বিভাগীয় শহরগুলোতে পৌঁছে দিতে বিআরটিসি বাসও ভাড়া করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছবি: নিউজবাংলা
গ্রামেও শিক্ষার্থীদের আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আইসোলেশন ইজ দ্যা বেস্ট সলিউশন। আইসোলেশনে না থেকে সবার সাথে মেলামেশা করলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। আমাদের পাশেরজনকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত করলে অনেক সমস্যা হতে পারে।’
ইমদাদুল হক আরও বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের জন্যই। শিক্ষার্থীদের ছাড়া আমাদের দামও নাই, মূল্যও নাই, কাজও নাই। শিক্ষার্থীরা ভালো না থাকতে পারলে আমরা ভালো থেকে কি করব।
‘আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, যেন তারা কারও সংস্পর্শে না যায়। শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দিতেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।’
চলমান করোনা মহামারির মধ্যে আসন্ন ঈদুল-আজহায় শিক্ষার্থীদের নিরাপদে গ্রামে পৌঁছে দিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন আহ্বান করে। ১৩ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থী এ আবেদন করেন।
শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দিতে পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজস্ব পরিবহন ছাড়াও বিআরটিসির বাস ভাড়া করে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত শনিবার রাজশাহী, সিলেট ও রংপুর বিভাগে, রোববার বরিশাল ও খুলনা বিভাগে এবং সোমবার ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়।