করোনাকালে লকডাউনে ঢাকায় আটকে থাকা প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর বিশেষ বাস সার্ভিসের আওতায় বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রশাসন।
দীর্ঘ যানজটের কারণে বাড়ি পৌঁছাতে দেরি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
চলতি মাসের ১৭-১৯ জুলাই ৪৮টি বাসের মাধ্যমে দেশের সর্বমোট ৫৪ জেলায় প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ-আল-মাসুদ নিউজবাংলার প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানান। সবশেষ শেরপুর জেলার বাসটিও গন্তব্যে পৌঁছেছে বলে জানান তিনি। এর মাধ্যমে ৫৪ জেলার শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ-আল-মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, তিনদিনে ৫৪ জেলায় প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীকে বাড়ি পৌঁছানো হয়েছে। প্রথমদিন ২৩টা বাস, দ্বিতীয় দিন ১০টা দোতলা বাস আর ১টা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস, আজ শেষদিন ৯টা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গিয়েছে।
এই সার্ভিসের আওতায় ১৭ জুলাই টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ (ভৈরব), ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, সৈয়দপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম এসব জেলায় শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস।
১৮ জুলাই বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাগুড়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট জেলায় শিক্ষার্থীদের এবং ১৯ জুলাই ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, জামালপুর, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর ও চট্রগ্রাম জেলায় শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছাতে বাস ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়।
নওগাঁ, জয়পুরহাট, নড়াইল, ভোলা, সুনামগঞ্জ, শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি এই ১০টা জেলায় যায়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস।
মাঝ পথে শিক্ষার্থীদের সেলফি।
দিনাজপুর যাওয়া শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যানজটের কারণে আসতে প্রায় ২৪ ঘন্টা সময় লেগেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারছি এটাই অনেক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রসানকে ধন্যবাদ।’
রাজশাহী যাওয়া শিক্ষার্থী ফারজানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পেরেছি। প্রশাসনের এমন ব্যবস্থাপনার জন্য অনেক ধন্যবাদ।’
নোয়াখালীগামী শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, ‘এই প্যান্ডেমিক সিচুয়েশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বাড়ি ফিরতে পারছি আলহামদুলিল্লাহ। আশাকরি নিরাপদে পৌঁছাতে পারব। প্রশাসনের এমন ব্যবস্থাপনাকে সাধুবাদ জানাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, আমরা প্রায় প্রত্যেকটি জেলায় শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পেরেছি। এটা আমাদের অনেক বড় প্রাপ্তি।
নিউজবাংলাকে তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধকতার চেয়েও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ ছিল। শিক্ষার্থীদের তালিকা করে তা যাছাইবাছাই করা, রুটম্যাপ তৈরি করা। এই সময়ে বিআরটিসির বাসেরও সংকট চলছে। রুট অনুযায়ী বাসের ব্যবস্থা করতে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে।’
‘অভিভাবক হিসেবে এই কঠিন সময়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পেরেছি এই আনন্দের কাছে এসব চ্যালেঞ্জ কিছুই না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিনদিনে ৪৮টি বাসে করে ৫৪টি জেলায় প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা সম্পন্ন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরাকে নিরাপদ ও সুনিশ্চিত করতে পেরে আমরা সত্যিই খুব আনন্দিত। এ যাত্রা ও উদ্যোগ শিক্ষার্থী ও প্রশাসন উভয়ের কাছেই অনেক বড় পাওয়া ও আনন্দের।’
মহৎ এই উদ্যোগটির সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সবসময়ই ছাত্রবান্ধব কাজ করে আসছি। শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পেরেছি, এটা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বেশি কল্যাণকর সিদ্ধান্ত ছিল। নানা চ্যালেঞ্জ থাকার পরও শিক্ষার্থীরা নিজস্ব পরিবহনে বাড়ি ফিরতে পেরেছে।’
নিউজবাংলাকে তিনি আরও বলেন, ‘সংকটকালে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেয়াই আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। এটাই আমাদের সাফল্য।’
তিনি বলেন, ‘এই কাজের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তারা নিরলস পরিশ্রম করে পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপদান করেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। শিক্ষার্থীরা নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পারছে, অভিভাবক হিসেবে আমরা আনন্দিত।’
করোনাকালে আসন্ন ঈদুল আজহায় শিক্ষার্থীদের নিরাপদে গ্রামে পৌঁছে দিতে প্রশাসন বরাবর সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করেছিল। এই বিষয়টি বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। গত ১৩ জুলাই আবেদনের শেষ দিন পর্যন্ত জমা পড়ে ৩ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থীর আবেদন। এসব শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজস্ব পরিবহন ছাড়াও বিআরটিসির বাস ভাড়া করে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবারে রাজশাহী, সিলেট এবং রংপুর বিভাগে; রোববার বরিশাল ও খুলনা বিভাগে এবং সোমবার ময়মনসিংহ ও চট্রগ্রাম বিভাগের শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দেয়া হয়। বাস ছেড়ে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ, প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল, ছাত্র-কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী, পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ্-আল মাসুদ এবং সহকারী প্রক্টররা উপস্থিত ছিলেন।