সশরীরে পরীক্ষা দিতে এসে লকডাউনের কারণে আটকে থাকা শিক্ষার্থীদের জগন্নাথ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পরিবহন সেবায় বাড়ি পৌঁছে দিলেও আবেদন অগ্রাহ্য করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষার্থীরা গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ফেসবুক পেজগুলোতে কর্তৃপক্ষকে কটাক্ষ করতে নানা ধরনের পোস্ট দিচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে না দেওয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা উল্লেখ করে ‘শেম অন ডিইউ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন' হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আগে অন্যরা অনুসরণ করত। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীদের অবহেলা করার কোনো সুযোগই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাড়ছে না। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার সেই পথ হারিয়ে ফেলছে।
আবাসিক হল বন্ধ রাখার শর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা গত ১ জুলাই থেকে সশরীরে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সে অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগ ইনিস্টিউট পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে। ফলে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় চলে আসে।
তবে জুনের শেষ দিকে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শাটডাউন ঘোষণা করে সরকার। আর সশরীরে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিশ্ববিদ্যালয়। কঠোর লকডাউনে অনলাইনেও পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শাটডাউন শুরু হওয়ায় পরীক্ষা দিতে ঢাকায় আসা শিক্ষার্থীরা বাড়িতেও ফিরতে পারছিল না। পরের মাসের বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের। এতে বিপাকে পড়ে যায় তারা।
সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দেয়া ধারণাতেও যায় না। এ বিষয়ে প্রশ্নও তিনি কখনও শুনেননি৷
তবে শাটডাউন শিথিল করার পরও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পরিবহনে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দেয়া শুরু করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ সামাদ বরাবর লিখিত আবেদন দেয়।
অধ্যাপক সামাদ শিক্ষার্থীদের আবেদনে সুপারিশ করলেও উপাচার্য সেটিতে কোনো সাড়া দেননি। এতে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুব রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্ররা কিন্তু নিজে থেকে ঢাকায় আসেনি। ছাত্রদের মানসিক, আর্থিক ও শারীরিক কষ্ট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কিছু বিভাগ ঢাকায় আসতে বাধ্য করেছে।
‘কোনো আগাম ঘোষণা না দিয়ে ঢাকায় আসতে বাধ্য করা হয়েছে। আবার কোনো আগামর ঘোষণা না দিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করে ছাত্রদের আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ উদ্যোগেই সমস্যা সমাধান করা দরকার ছিল বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘অন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে, তা কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করবে না?’
তিনি বলেন, ‘আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্যরা অনুসরণ করত, এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার সেই পথ হারিয়ে ফেলছে।’
মনোবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রনো আনোয়ার বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর ১০৮০ টাকা পরিবহন ফি দিয়েও এই সংকটকালে পরিবহন সুবিধা পাচ্ছি না। অথচ ৩৬০ টাকা পরিবহন ফি দিয়েও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেই সুবিধা পেল। ঠিকই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিরাপদে পৌঁছে দিচ্ছে।’
রাকিবুল হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বলছে সশরীরে পরীক্ষা নেবে। ফলে অনেকে ক্যাম্পাসের আশেপাশে এসেছে শুধু পরীক্ষা দেয়ার জন্য। এই অবস্থায় কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব ছিল তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া।’
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুলিয়াস সিজার তালুকদার বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্বহীনতার দৃষ্টান্তে হিমালয়সম। অন্যসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা নিতে হবে এখন। অধঃপতন আমাদের এভাবেই হয়েছে।
‘বাড়ি থেকে ডেকে এনে ঢাকার বিবর্ণ জীবনে দিনের পর দিন অবরুদ্ধ রেখেছে, আর বাড়ি ফেরার বিন্দুমাত্র দায়িত্ব নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এক জন শিক্ষার্থী হিসেবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে হৃদয় নির্গত শ্রদ্ধা।’
কেন শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দেয়া যায়নি- জানতে চাইলে এর সঠিক কোনো উত্তর দেননি উপাচার্য আখতারুজ্জামান। তবে তারা সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে আছেন বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং খুবই মানবিকও। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ ইনিস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর রাখে। কারও কোনো বড় আকারের সমস্যা থাকলে বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা সহায়তা করে থাকি।’