করোনাভাইরাস পরিস্থিতি দেখে চলতি বছরের এসএসসি, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষাগুলো সীমিত পরিসরে নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এসএসসি নেয়া হতে পারে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এবং এইচএসসি নেয়া হতে পারে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।
রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন থেকে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি কমে এলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
গত বছরের কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বরে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল। এ ছাড়া, টিকাদান ব্যাপকহারে শুরু হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সীমিত পরিসরে পরীক্ষার আয়োজন করা হবে।’
দীপু মনি জানান, এসএসসি ও এইচএসসিতে মূল্যায়ন হবে গ্রুপভিত্তিক। বাংলা, ইংরেজির মতো আবশ্যিক বিষয়ের মূল্যায়ন হবে না। অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শেষ করা হবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস।
তিনি বলেন, ‘যদি পরীক্ষা না নিতে পারি তাহলে অ্যাসাইনমেন্ট এবং সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করা হবে।’
পরীক্ষার সময় কমানো হবে
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ২৪-৩০টি অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে তিন ঘণ্টার পরীক্ষা দেড় ঘণ্টায় হবে। আর ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে ৫০ নম্বরে।
তিনি আরও বলেন, তিন ঘণ্টার পরীক্ষা দেড় ঘণ্টায় নেয়া হবে। তাই কোনো শিক্ষার্থী যদি অ্যাসাইনমেন্টগুলো ভালোভাবে করে তবে পরীক্ষায় কোনো সমস্যা হবে না। আগে পরীক্ষায় যেমন ১০টি প্রশ্নের মধ্যে ৮টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো। এখন সেই ১০টি প্রশ্নই থাকবে। কিন্তু উত্তর দিতে হবে তিনটি প্রশ্নের। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অপশন বেড়ে যাবে। তাই পরীক্ষা দিতে সুবিধা হবে। মানবণ্টনও ১০০ নম্বরের জায়গায় ৫০ নম্বর করে দেয়া হবে। মূল্যায়নের সময় সেটাকে ১০০ নম্বরে কনভার্ট করে নেয়া হবে।
প্রশ্নের ধরন কেমন হবে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. দীপু মনি বলেন, প্রত্যেকবার যেমন প্রশ্ন হয় তেমনি থাকবে। কিন্তু চয়েজ অনেক বেশি থাকবে। এসএসসির সাবজেক্ট ম্যাপিং জেএসসির বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে মূল্যায়ন হবে।
ঈদের পর ফরম পূরণ
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ঈদুল আজহার পর শিক্ষার্থীদের ফরম ছাড়ার পাশাপাশি পূরণের কার্যক্রম শুরু হবে। অনলাইনে ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নেয়া হবে। ফলে কোনো শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে না।’
দীপু মনি বলেন, ‘এবার যেহেতু কম বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে সে ক্ষেত্রে ফরম পূরণেও অল্প টাকা দিতে হবে।’
এসএসসি ও এইচএসসির অ্যাসাইনমেন্ট
শিক্ষামন্ত্রী জানান, এসএসসি ও সমমানের অ্যাসাইনমেন্ট ১৮ জুলাই থেকে দেয়া শুরু হবে। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ১২ সপ্তাহে ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে। তারা প্রতি সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবে। এসএসসির ক্ষেত্রে প্রতিটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে মোট আটটি করে অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে। এর মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি সম্পন্ন করা হবে।
এইচএসসি ও সমমানের অ্যাসাইনমেন্ট ২৬ জুলাই শুরু হবে। ওই স্তরের শিক্ষার্থীদের ১৫ সপ্তাহে মোট ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে। তাদেরও গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে মোট ছয়টি পত্রে (প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র) এই অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। প্রতি পত্রে পাঁচটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। তাদেরও সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। এভাবে তাদেরও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস সম্পন্ন করা হবে।
সপ্তাহে এসব শিক্ষার্থীরা দুটি অ্যাসাইনমেন্ট করবে। এর ফলে আগে যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেয়া হয়েছিল এর মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শেষ করা হবে। তবে অতিরিক্ত বিষয়ে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে না।
মন্ত্রী বলেন, বাংলা, ইংরেজিসহ আবশ্যিক বিষয়ে এবং চতুর্থ বিষয়ে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে না শিক্ষার্থীদের। আবশ্যিক বিষয়ের নম্বর জেএসসি, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে নম্বর নির্ধারণ করা হবে। অর্থাৎ শুধু নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে।
দীপুমনি বলেন, এবারও গত বছরের মতো সাবজেক্ট ম্যাপিং করা হবে। যেসব শিক্ষার্থীর পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত আছে তাদের এসব বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট বা পরীক্ষা দিতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যদি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে অ্যাসাইনমেন্ট ও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে অথবা শুধু সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়ন করা হতে পারে। সেটি পরে জানানো হবে।
তিনি মনোযোগ দিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মতোই তাদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে তাদের মূল্যায়ন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নৌফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক, জাতীয় শিক্ষক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা।
দেশে করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় বন্ধ বাড়িয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত করা হয়েছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে কয়েক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও এপ্রিলে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা শুরু হলেও এ বছর করোনার কারণে এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা এখনও নেয়া সম্ভব হয়নি। গত বছর এসএসসি পরীক্ষা নেয়া গেলেও এইচএসসিতে শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয় সরকার।
এর আগে সময় পিছিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি পরীক্ষা জুনে ও এইচএসসি পরীক্ষা আগস্টে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সে জন্য এসএসসির ৬০ দিন ও এইচএসসির ৮৪ দিন ক্লাস ধরে পরিমার্জিত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসও প্রকাশ করেছিল শিক্ষা বোর্ড। হঠাৎ করে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এ ঘোষণার বাস্তবায়নও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।