শৈশব থেকেই ইংরেজি শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপের প্রয়োজন মনে করছেন অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্যের (ভিসি) মতে, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী আসেন, তারা অর্ধশিক্ষিত। তাদের ইংরেজি শিক্ষার কোনো জ্ঞানই নেই।
বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি এ অভিমত দেন।
‘শতবর্ষের অভিযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনার হয় মঙ্গলবার রাতে। এর শুরুতে ‘ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণার শতবর্ষ অর্জন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান। দলের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের
অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খানসহ শিক্ষকরা।
সেমিনারে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সিদ্ধান্ত শিক্ষার মাধ্যম হবে বাংলায়। কিন্তু বাংলায় উচ্চশিক্ষা দিতে হলে যে পরিমাণ বাংলা রেফারেন্স বই দরকার, আমাদের সে পরিমাণ বই নেই। এটি আমাদের ব্যর্থতা।’
তিনি বলেন, “আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এক শিক্ষককের কাছে জানতে চাইলাম, ‘তুমি ক্লাসে আবোল তাবোল কথা বলো, পড়ে ক্লাসে যাও না কেন?’ উত্তরে সে আমাকে বলেছিল, ‘স্যার, ইংরেজি বই পড়ে আমি কিছু বুঝতে পারি না।’”
ক্ষোভ প্রকাশ করে আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পাই, তখন তারা অর্ধশিক্ষিত। এদের ইংরেজি শিক্ষার কোনো জ্ঞানই নেই। শিক্ষকরাই ইংরেজি বই বোঝেন না, ছাত্ররা কী বুঝবে! এ জন্য আমাদের শিক্ষার মান নিম্নগামী। আমরা অর্ধশিক্ষিত গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি৷ আমরা পরিকল্পিতভাবেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছি।’
সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘আমি তিনটা শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলাম। অনেক রিপোর্ট তৈরি করেছি। এসব রিপোর্টে অনেক সুপারিশ উল্লেখ থাকে। তার মধ্যে একটা সুপারিশ ছিল ক্লাস থ্রি থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। কিন্তু শিক্ষা কমিশনের কোনো রিপোর্ট বাস্তবায়ন হয় না; এটাও হয়নি।’
গবেষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সব গবেষণার জন্য বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। অনেক মৌলিক গবেষণা আছে, যার জন্য বরাদ্দ নয়, সাধক হতে হবে; সাধনা করতে হবে। সে সাধনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই, এ কথা স্বীকার করতে হবে।’
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রদের দলীয় লেজুড়বৃত্তি, রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ, বাজেট-সংকটসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।