বিপুলসংখ্যক আবেদন জমা পড়ার পরেও চট্রগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে বাস না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। এতে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীতে আটকা পড়া ওই তিন বিভাগের প্রায় সাড়ে ৩০০ শিক্ষার্থী।
এদিকে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়াবাড়ি না করার উপদেশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আজিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেয়া সিদ্ধান্তে যদি কারো কোনো আপত্তি থাকে, তাহলে তারা যেন সেটা ভদ্রভাবে প্রশাসনকে জানায়। এটা নিয়ে যেন কোনো বাড়াবাড়ি না করে। তারা আবেদন জানালে কমিটি নতুন করে বসে আবার সিদ্ধান্ত নেবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, দূরের বিভাগ বা জেলাগুলোতে যেতে পারবে এমন বাসের সংখ্যা কম এবং শিক্ষার্থী অধিক হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অনেক বাস পুরাতন হওয়ায় পথে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দূরের তিন বিভাগে বাস দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
৫ জুলাই রাজশাহীতে আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দিতে তাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য আইসিটি সেন্টার কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে একটি লিংক দেয়া হয়। সেখানে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। অধিক সংখ্যক আবেদন এবং দূরপাল্লার বাস কম থাকায় নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা গঠিত একটি কমিটি মোট ১২টি রুটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বাদ পড়েছেন চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বিষয়টি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আজিজুর রহমান।
এদিকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ওই তিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার সঙ্গে দেখা করে তাদের রুটে বাসের আবেদন জানিয়েছেন।
আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন আবদুল বাতেন বলেন, ‘আমাদের বাড়ি রাজশাহী থেকে অনেক দূর। এখানে লকডাউনের মধ্যে আমাদের থাকা-খাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি অন্তত বিভাগীয় শহর পর্যন্ত বাস দেয়ার জন্য।’
জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আজিজুর রহমান বলেন, ‘কমিটি সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে নাটোর, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা (রাবি-বগুড়া-পলাশবাড়ী), বগুড়া, কুষ্টিয়া, রংপুর (রাবি-বগুড়া-রংপুর), দিনাজপুর (বদলগাছি-জয়পুরহাট-বিরামপুর-ফুলবাড়ী-দিনাজপুর), ঢাকা (গাবতলী), ময়মনসিংহ ও খুলনাসহ মোট ১২টি রুটে পরিবহন সেবা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দূরের বিভাগ বা জেলাগুলোতে যেতে পারবে এমন বাসের সংখ্যা কম এবং শিক্ষার্থী অধিক হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অনেকগুলো বাস পুরাতন হওয়ায় পথে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক মকসিদুল হক বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের মোট ২৭টি বাস সচল আছে। এর মধ্যে ২১টি বাস পুরাতন এবং এই বাসগুলো পথে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় কাছের জেলা বা রুটগুলোতে দেয়া হবে। বাকি ছয়টি বাস দূরের বিভাগ বা জেলাগুলোতে যেতে পারবে। তবে আমরা চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে বাস দিতে পারছি না। বাসের চেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অধিক হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগে ১১৫-২০ জন বাসের আবেদন করেছে। সিলেট বিভাগে প্রায় ১০০ জন ও বরিশাল বিভাগে ১৫০-১৬০ জনের মতো শিক্ষার্থী বাসের জন্য আবেদন করেছে।’
বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘করোনা এবং দেশের সার্বিক বিষয় চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে বাদ পড়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের বাড়ি অনেক দূর, এরপরও করোনা মহামারির কথা ভেবে আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাদ পড়া শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে দেখা করেছে। তাদেরকে বাস দেয়ার জন্য তারা আবেদন জানিয়েছে।’
অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘তাদেরকে বিভাগীয় শহরে পৌঁছে দেয়া জরুরি, আমি তাদের এলাকায় বাস দেয়ার পক্ষে। এ বিষয়ে আমি আবারও স্থানীয় প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, রেজিস্ট্রারসহ আমার সহকর্মীদের সঙ্গে আগামীকাল (শনিবার) মিটিংয়ে বসব। তখন তাদের বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’