করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে পরীক্ষার ফি মওকুফের দাবি জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বিভিন্ন খাতের বেঁচে যাওয়া অর্থ থেকে ভর্তুকি দিয়ে যাতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও পরীক্ষার ফি মওকুফ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মহামারির প্রভাবে প্রায় অচল শিক্ষা কার্যক্রম। এমন অবস্থায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বাড়িতে বসে সময় পার করছেন। আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়ুয়া প্রায় সকল শিক্ষার্থীই পুরান ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় মেস ভাড়া করে থাকেন। এদের অনেকেই টিউশনি এবং খণ্ডকালীন চাকরি করে তাদের শিক্ষার খরচ চালান।
মহামারিতে টিউশন এবং চাকরির পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ফি মওকুফের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক গ্রুপে পোস্ট করছেন তারা। একই সঙ্গে নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইলেও এ বিষয়ে লেখালেখি করছেন অনেকে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলেও জানা গেছে।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আদনান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এখন খুবই খারাপ। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফি পরিশোধ করা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য। এমন সময়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।’
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আজহার বলেন, ‘আমার বাড়ি কুষ্টিয়ায়। গত বছর লকডাউনের শুরু থেকেই বাড়িতে অবস্থান করছি। টিউশন করে পড়ালেখার খরচ নিজেই চালাতাম। মহামারির কারণে টিউশন করানোও সম্ভব হচ্ছেনা।’
তিনি বলেন, ‘এমনিতেই পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। এর মধ্যে আবার দুই সেমিস্টারের পরীক্ষার ফি একসাথে দিতে বলা হয়েছে, যা এই অবস্থায় একেবারেই দেয়া সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, ফি মওকুফের বিষয়টি বিবেচনা করে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তানজিম সাকিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ তুলনামূলক কম৷ এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলেই ফিগুলো মওকুফ করতে পারে৷। আমরা চাই যে, শিক্ষার্থীদের সকল ফি মওকুফ করে তাদের অর্থাভাব লাঘব করা হোক।’
ছাত্রফ্রন্টের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি সুমাইয়া সোমা বলেন, ‘কোনো রকম আয়োজন ছাড়া অনলাইন ক্লাসসহ ভর্তি ফি, সেমিস্টারের ফি, বিলম্ব ফি এবং বিভিন্ন আরোপিত ফি শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যস্ত করা হচ্ছে, যা জবির ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বোঝা এবং অমানবিকতা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেয়া পর্যন্ত এবং খোলার পরের সময়ে শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফিসহ অন্যান্য বকেয়া ফি মওকুফ করতে হবে।’
ছাত্র ইউনিয়ননের জবি শাখার সভাপতি কে এম মুত্তাকী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা মহামারির সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা গত বছর পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলাম৷ সেখানে ভর্তি ফি, সেমিস্টার ফি মওকুফ করার দাবিও ছিল৷
‘এখনও আমরা সেই জায়গাতেই আছি যে, শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি, ভর্তি ফিসহ সকল ফি মওকুফ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে মানবিক হতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
জবির ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউনের পর বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিলম্ব ফি মওকুফ করা হয়েছে। পরীক্ষার ফি মওকুফের কোনো নির্দেশনা আসেনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরীক্ষার ফি মওকুফের কোনো সুযোগ নেই। প্রথম কথা হচ্ছে আমি এসেছি এক মাস হয়েছে মাত্র। ছাত্ররা চেয়েছে বিলম্ব ফি মওকুফ, তা আমাদের হাতে আছে। আমরা সেটি সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিয়েছি।
‘প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ যা আয় হয় ইউজিসি সেটি পরবর্তী বছর কম দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তো সব কিছু জাস্টিফাই করতে হয়। হঠাৎ করে ফি বাতিল করে দিলে ঘাটতি বাজেট কোথা থেকে পূরণ করব?’
গত বছর করোনাভাইরাস পরবর্তী শিক্ষার্থীদের ‘শিক্ষা সংকট’ নিরসনে পাঁচ দফা দাবী জানিয়েছিল ছাত্র ইউনিয়নের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। এর মধ্যে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ও নতুন সেমিস্টারে ভর্তির ফি মওকুফ করার দাবিটি উল্লেখযোগ্য ছিল।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আটকে থাকা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাগুলো সশরীরে ১০ আগস্ট থেকে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের ২৯ জুনের মধ্যে ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য ফি প্রদান ও ফরম পূরণের নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷
পরে ৩০ জুন ফি প্রদান ও ফরম পূরণের সময়সীমা ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আর্থিক সমস্যার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই ফি পরিশোধ করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সেটি মওকুফের দাবি জানিয়ে আসছেন।
এদিকে করোনা ভাইরাসের সময়ে চলা শিক্ষার্থীদের সকল পরীক্ষার ফিসহ সব ধরনের ফি মওকুফ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।