নতুন কারিকুলামে মাধ্যমিকে থাকছে না বিভাগ। এতদিন শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের মধ্যে পছন্দ অনুযায়ী বাছাই করত। নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা নবম-দশম শ্রেণিতে পড়বে সব বিষয়।
এর বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২৩ সাল থেকে। বিষয়টিকে ইতিবাচক বলছেন শিক্ষাবিদরা।
নতুন কারিকুলামে একজন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে সব বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত ও জ্ঞান লাভ করবে। অর্থাৎ সব ধরনের শিক্ষা বা অভিন্ন শিক্ষা নিয়েই শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর শেষ করতে হবে।
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি থেকে বিভাগ নির্বাচন শুরু হবে।
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন কারিকুলাম তৈরি করছে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এতে থাকবে না মাধ্যমিক স্তরে বিভাগসমূহ (বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক)। এ ধরনের কারিকুলামকে এনসিটিবি বলছে গুচ্ছভিত্তিক কারিকুলাম। নতুন এই কারিকুলামের বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২৩ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন বই দেয়ার মাধ্যমে। এরপর ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বই পাবে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী মাধ্যমিকের বিভাগসমূহ থাকবে না। এর পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা নবম-দশম শ্রেণিতে একই কারিকুলামের একই পাঠ্যবই পড়বে।
কবে নাগাদ নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন কারিকুলামের বই হাতে পাবে, এমন প্রশ্নে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০২২ সালে মাধ্যমিক স্তরের দুটি ক্লাসে (ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি) পাইলটিং করা হবে। এরপর ২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই দেয়া শুরু হবে। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি ক্লাসে নতুন কারিকুলামের বই দেয়া হবে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে পাইলটিং প্রকল্পের ফলাফলের ওপর।’
তিনি আরও বলেন, ‘বলা যায়, যে শিক্ষার্থী ২০২৩ ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বই পাবে, সেই শিক্ষার্থী ২০২৬ সালে এসে নবম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বই পাবে।’
এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে খুবই সতর্কতার সঙ্গে এর বাস্তবায়ন করতে হবে। বাস্তবায়নের আগে শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে এর কাঙ্ক্ষিত ফল মিলবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দা তাহমিনা আক্তার নিউজবাংলকে বলেন, ‘এ ধরনের সুপারিশ কুদরত-ই-খুদা কমিশনও করেছিল। শুনে ভালো লাগল এতদিন পর হলেও সরকার বিষয়টি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন যথাযথ প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’
এর আগে এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, ‘আমাদের কারিকুলামের পুরো পর্যালোচনা হচ্ছে। খুব শিগগিরি চূড়ান্ত রূপটি প্রকাশ করব। সেখানে আমাদের সব ধরনের শিক্ষাতে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায়- এই বিভাগগুলো নবম-দশম শ্রেণিতে আর রাখছি না। সব শিক্ষার্থী সব ধরনের শিক্ষা নিয়ে স্কুলের ১০টি বছর শেষ করবে।’
এনসিটিবি থেকে জানা যায়, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় নতুন কারিকুলাম প্রণয়নের জন্য ২০১৬ সালে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে গঠন করা হয় একটি কমিটি। একই বছরের ২৫-২৬ নভেম্বর কমিটির সদস্যরা কক্সবাজারে দুই দিনের আবাসিক কর্মশালায় অংশ নেন। এতে শিক্ষাবিদরা বেশ কিছু সুপারিশ প্রস্তাব করেন। সেই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য কয়েকটি সাবকমিটিও গঠন করা হয়। এর একটি শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা সাবকমিটি। এ কমিটি ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ৮ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে একটি দফা হলো: পাঠ্যবইয়ের কিছু বিষয় বাধ্যতামূলক এবং কিছু বিষয় ঐচ্ছিক রাখা। এ ছাড়া বর্তমানে চালু থাকা তিন বিভাগের প্রায় সব বিষয় সব শিক্ষার্থীই যেন পড়তে পারে, সেভাবে কারিকুলাম প্রস্তুত করা।