অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমে নেতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করলে শিক্ষার্থীদের মনোবল নষ্ট হতে পারে বলে মনে করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
তাই এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের নেতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করা হবে না। শিক্ষাবিদরাও মাউশির এ পদক্ষেপকে সমর্থন করছেন।
অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নে যে সব শিক্ষার্থী ২০-এর মধ্যে ৫ বা ৫-এর কম পাবে, তাদের ‘অগ্রগতি প্রয়োজন’ লিখবেন শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের নেতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করতে চাই না। করোনার এই সময়ে নেতিবাচকভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে তাদের মনোবল কমানো সঠিক কাজ হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষাকার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, এজন্যই অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে জানতে পারবে এবং তাদের পরীক্ষাভীতি দূর হবে; যা এই সময়ে খুবই প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা মহামারির এই সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রমে যুক্ত রাখা খুবই জরুরি। আর যে পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে তা অবশ্যই ভালো। কেননা নেতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করলে শিক্ষার্থীদের মনে এর প্রভাব পড়ে, যাতে শিক্ষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দা তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত রাখাই চ্যালেঞ্জ। অবশ্যই অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম ভালো পদক্ষেপ। আর মূল্যায়ন পদ্ধতিও মানসম্পন্ন বলেই আমার মনে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীর মনে নেতিবাচক ধারণা এলে তার ফল ভালো হয় না। সে ভুল বা খারাপ করলে শিক্ষক তাকে সংশোধন করে দেবেন। আমি মনে করি, চলমান প্রক্রিয়া ঠিকই আছে।’
গত বছর করোনা মহামারি দেখা দেয়ার পর ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রমে যুক্ত থাকতে দেয়া হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট। করোনাকালে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মধ্যে রাখাই এই অ্যাসাইনমেন্টের উদ্দেশ্য। এর ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নও করা হবে। তবে ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা এ অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমের বাইরে থাকবে। এ কার্যক্রম চলছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে।
অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করার পর মোট চার ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকরা। ক্যাটাগরিগুলো হলো ‘অতি উত্তম’, ‘উত্তম’, ‘ভালো’ ও ‘অগ্রগতি প্রয়োজন’। যে সব শিক্ষার্থী ২০ নম্বরের মধ্যে ১৬ পাবে, তাদের অতিউত্তম, ১১-১৫ পেলে উত্তম, ৬-১০ পেলে ভালো এবং ৫ বা ৫-এর কম পেলে অগ্রগতি প্রয়োজন বলে মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকরা।
চলতি বছরের ২০ মার্চ থেকে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়। এরপর লকডাউনের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে গত ২৩ মে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম আবার শুরু করে মাউশি। ইতিমধ্যে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করা হয়েছে। আর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রথম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টও দেয়া হয়েছে।
দেশে করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। ভাইরাসের বিস্তার রোধে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় তা ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।