বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গবেষণায় চুরি: ঢাবি শিক্ষক লীনার পিএইচডি বাতিলের দাবি

  •    
  • ১৩ জুন, ২০২১ ২০:৪৩

লীনা তাপসীর পিএইচডির ওপর রচিত ‘নজরুল-সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার’ বইটি বাতিল, ডিগ্রি দেয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি এবং এই ডিগ্রির জন্য প্রাপ্ত নজরুল পদক বাতিলের জন্য কবি নজরুল ইনস্টিটিউট এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহসিনা আক্তার খানমের (লীনা তাপসী খান নামেই বেশি পরিচিত) বিরুদ্ধে তার পিএইচডির গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ এনে সর্বোচ্চ অ্যাকাডেমিক ডিগ্রিটি বাতিলের দাবি উঠেছে।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা অ্যাকাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস।

এ ছাড়া লীনা তাপসীর ডিগ্রির ওপর রচিত ‘নজরুল-সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার’ বইটি বাতিল, ডিগ্রি দেয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি এবং এই ডিগ্রির জন্য প্রাপ্ত নজরুল পদক বাতিলের জন্য কবি নজরুল ইনস্টিটিউট এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানিয়েছেন তিনি৷

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইফফাত আরা আরও বলেন, ‘সংগীতের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে আমি লীনা তাপসী খানের “নজরুল-সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার” নামের বইটি সংগ্রহ করি। কিন্তু বইটি পড়ে আমার এর আগে পড়া ৩-৪টি গ্রন্থের সঙ্গে বেশ কিছু অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাই, যা পরিষ্কার চৌর্যবৃত্তি।’

তিনি জানান, ‘এ বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি লীনা তাপসী খানের পিএইচডির অভিসন্দর্ভের (বৃহত্তর গবেষণাপত্র) ওপর ভিত্তি করে রচিত বই ‘নজরুল-সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার’ সম্পর্কে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তদন্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তাতেও কোনো ফল আসেনি।’

এর আগে অ্যাকাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমানসহ তিন শিক্ষককে পদাবনতির শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনর্ধারণী এই ফোরাম সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করেছে।

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে ঢাবির সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমানসহ তিন শিক্ষককে পদাবনতির শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। ছবি:সংগৃহীত

শাস্তি হিসেবে সামিয়ার গবেষণা প্রবন্ধের সহলেখক অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানকে শিক্ষা ছুটি শেষে চাকরিতে যোগদানের পর দুই বছর একই পদে থাকতে হবে।

একই সিন্ডিকেট সভায় পিএইচডি থিসিসে জালিয়াতির আরেক ঘটনায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুকের ডিগ্রি বাতিলের পাশাপাশি তাকে সহকারী অধ্যাপক থেকে প্রভাষক পদে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।

গত ২৮ জানুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে বইয়ের ৩৮টি জায়গার উল্লেখ করে চোর্যবৃত্তির অভিযোগ এনেছেন ইফফাত আরা নার্গিস। এর মধ্যে আছে বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ৪২ লাইন, তৃতীয় অধ্যায়ে ৭ লাইন, চতুর্থ অধ্যায়ে ২৬ লাইন, পঞ্চম অধ্যায়ে ৬ লাইন, ষষ্ঠ অধ্যায়ে ১ লাইন, দশম অধ্যায়ে ১২৬ লাইন, একাদশ অধ্যায়ে ১২২ লাইন, ত্রয়োদশ অধ্যায়ে ৬৫ লাইন এবং চতুর্দশ অধ্যায়ে ৫৩ লাইন। এসব লাইন রবীন্দ্রনাথের ‘গীতিবিতান’ ও ‘নজরুল-গীতিকা, ইদ্রিস আলীর লেখা ‘নজরুল সঙ্গীতের সুর’, স্বরলিপিকার জগৎ ঘটক ও কাজী অনিরুদ্ধের ‘নবরাগ’, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘নজরুল সৃষ্ট রাগ ও বন্দিশ’ এবং কাকলী সেনের ‘ফৈয়াজী আলোকে নজরুলগীতি’- এসব বই থেকে তথ্য নির্দেশ ছাড়া হুবহু চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

এ ছাড়া নায়েমের সাবেক এই মহাপরিচালক অভিযোগ করেন, ২৮০ পৃষ্ঠার বইয়ে ৮০ পৃষ্ঠার স্বরলিপি স্ক্যান করে ঢোকানো হয়েছে মূল পাঠ হিসেবে, যা অনৈতিক। দেখা যাচ্ছে যে ২৭৭ পৃষ্ঠার বইয়ের ১৬৯ পৃষ্ঠাই লীনা তাপসী খানের রচনা নয়।

এগুলো অন্যের বই থেকে হুবহু নেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট পৃষ্ঠাগুলোর মধ্যেও চৌর্যবৃত্তি পাওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ অবস্থায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

জানা যায়, ২০১০ সালের মে মাসে লীনা তাপসী এটিকে পিএইচডির গবেষণাপত্র (থিসিস) হিসেবে উপস্থাপন করেন। ২০১১ সালে নজরুল অ্যাকাডেমি তার ওই থিসিস বই আকারে প্রকাশ করে।

এতদিন পর কেন সংবাদ সম্মেলন, জানতে চাওয়া হলে ইফফাত আরা বলেন, ‘এই গবেষণা চৌর্যবৃত্তির বিষয়ে আমি অনেক আগেই অবগত ছিলাম। তবে এ রকম একটি কাজে অগ্রসর হইনি। কিন্তু ইদানীং লীনা তাপসী খানের তত্ত্বাবধানে একজন ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে বেরিয়ে গেছেন এবং আরও কয়েকজন এ প্রক্রিয়ায় মধ্যে রয়েছেন।

‘যার নিজের পিএইচডি ঠিক নেই, তিনি অন্যদের কী ডিগ্রি দিচ্ছেন এবং গবেষণার মান কোথায় নামাচ্ছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও সম্মানকে কতটা রসাতলে নিয়ে যাচ্ছেন, সেটা সহজেই অনুমেয়।

‘কিন্তু এখন আমার মনে হয়েছে, আমি যদি প্রতিবাদ না করি, তবে একটি বড় অপরাধকে প্রকারান্তরে সমর্থন করার অপরাধে আমিও অপরাধী হয়ে পড়ব। তাই আজ আপনাদের সামনে এসেছি।’

লীনা তাপসী খানের পাল্টা অভিযোগ

এদিকে নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ দাবি করেছেন লীনা তাপসী খান। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তার যেসব অভিযোগ তা মিথ্যা, ভুল এবং বানোয়াট। আমার বোর্ড আমাকে যেভাবে তত্ত্বাবধান করেছে, আমার গাইড আমাকে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, আমি সেভাবেই করেছি। ১২ বছর আগে করা পিএইচডির ভুল একজন ১২ বছর পরে ধরতে এসেছেন। তিনি কোন শিক্ষাবিদ, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শোধরাতে আসেন। তার নিজের কি কোনো গবেষণা রয়েছে?

নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ দাবি করেছেন লীনা তাপসী খান। ছবি:সংগৃহীত

তিনি বলেন, ‘সংগীতে প্রায়োগিক বিষয়ে আমার আগে কেউ কাজ (গবেষণা) করেননি। এ ধরনের গবেষণার পদ্ধতি প্রক্রিয়াও অন্য গবেষণার চেয়ে আলাদা। একটি স্বরলিপি যখন ছাপানো হয়, তখন একটি “রেফ”-এর কারণে আকাশ-পাতাল পার্থক্য হয়ে যায়। এতে প্রযুক্তিগত নানা ধরনের বিষয় আছে। সে ক্ষেত্রে অনেক সময় হুবহু স্ক্যান না করলে কাজ করা যাবে না। এখন কোথায় ফটোকপি করে দেব, স্ক্যান করে দিব, আমার গাইড আমাকে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমি সেভাবেই করেছি।’

তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগকে ‘প্রতিশোধমূলক’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিনি (ইফফাত আরা নার্গিস) আত্মপ্রচারণার জন্য একটা প্রতারণামূলক কাজ করছেন। আমি লিখিতভাবে এটার প্রতিবাদ জানাব।’

এ বিভাগের আরো খবর