বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটে চাকরি পেয়েছেন চট্টগ্রামের পতেঙ্গার জেলেপাড়ার সন্তান নিখিল জলদাশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নিখিল ইতোমধ্যে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির এসপো সিটিতে মাইক্রোসফটের অফিসে ল্যাব ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করেছেন।
নিখিল চট্টগ্রামের কাটগড় মুসলিমাবাদ জেলেপাড়ার বাসিন্দা নিরাঞ্জন জলদাশ ও কমলা দাশের একমাত্র সন্তান। পতেঙ্গা ইস্টার্ন রিফাইনারি মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ এইচএসসি পাস করেন তিনি।
ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে। সেখান থেকে ২০১৫ সালে স্নাতক ও ২০১৬ সালে স্নাতকোত্তর শেষে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ডে। ফিনল্যান্ডের ত্যামপেরে ইউনিভার্সিটিতে পদার্থ বিজ্ঞানে মাস্টার্সে পড়াশোনা করেন তিনি। এরপর গত ১২ এপ্রিল যোগ দেন মাইক্রোসফটে।
নিউজবাংলাকে নিখিল বলেন, ‘যখন আমার বাবা মারা যান, তখন আমার আমার বয়স ছিল চার বছর। আমি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। মা গার্মেন্টেসে চাকরি করেছেন, পরে একটি এনজিওতে চাকরি নেন। এসএসসির পর নিজের খরচ চালানোর জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করতে শুরু করি।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পর গবেষণার প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। কিন্তু আমার পিছুটান ছিল। টাকার অভাবে আমাকে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে টিউশনি করতে হতো। তাই গবেষণার সুযোগ পাইনি।
‘পরে চট্টগ্রামের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেছি। পাশাপাশি স্কলারশিপের জন্য ট্রাই করেছি। ২০১৮ সালে আমি স্কলারশিপ নিয়ে ফিনল্যান্ডে আসি। এরপর আমাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। মাইক্রোসফটে চাকরি হওয়ার আগে আমি এখানে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করি।’
সাফল্যের পেছনে মায়ের অনবদ্য ভূমিকার কথাও বলেন নিখিল।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। এখানে কাজ করতে পারাটা গর্বের। সৃষ্টিকর্তা আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। তবে আমার মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে আমি এতদূর আসতে পেরেছি।’
একমাত্র ছেলের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন নিখিলের মা কমলা দাশ।
তিনি বলেন, ‘বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে আমার স্বামী মারা যান। আমাদের একমাত্র সন্তান নিখিল। বাপের বাড়ি থেকে আমাকে বিয়ে দিতে অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নিখিলের দিকে তাকিয়ে আমি আর বিয়ে করিনি।
‘আমি পোশাক কারখানায় চাকরি করেছি, ৮০০ টাকা বেতনে এনজিওতে কাজ করেছি। অনেক কষ্টে সন্তানকে মানুষ করেছি। আমার চাওয়ার চেয়েও আমার ছেলে বেশি কিছু হয়েছে। আমি অনেক খুশি।’
কমলা দাশ বলেন, ‘টানাটানির সংসার ছিল। ভালো খাওয়াতে পারিনি ছেলেকে। ভালো জামা পরতে দিতে পারিনি। ছেলে এসব বুঝতো। তাই এসএসসি পাস করে টিউশন করা শুরু করে। নিজের খরচ নিজে জোগাত। তারপর থেকে আমার আর চিন্তা করতে হয়নি তাকে নিয়ে। এখন সেই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।’